পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী হইয়া নিক্স দিতেছে। এই পিছল পথ দিয়া কিছুদূর যাইতেই সন্ন্যাসী দেখিলেন, সম্মুখে দেয়াল উঠিয়াছে, পথ অবরুদ্ধ। কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। দেয়ালের সর্বত্র লৌহদণ্ড দিয়া সবলে আঘাত করিয়া দেখিলেন, কোথাও ফাক আওয়াজ দিতেছে না, কোথাও রন্ধ নাই, এই পথটার যে এইখানেই শেষ তাহ নিঃসন্দেহ । আবার সেই কাগজ খুলিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন। সে রাত্রি এমনি করিয়া কাটিয়া গেল । পরদিন পুনর্বার গণনা সারিয়া স্বরঙ্গে প্রবেশ করিলেন। সেদিন গুপ্তসংকেত অনুসরণপূর্বক একটি বিশেষ স্থান হইতে পাথর খসাইয়৷ এক শাখাপথ আবিষ্কার করিলেন। সেই পথে চলিতে চলিতে আবার এক জায়গায় পথ অবরুদ্ধ হইয়া গেল । অবশেষে পঞ্চম রাত্রে স্বরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করিয়া সন্ন্যাসী বলিয়া উঠিলেন, “আজ আমি পথ পাইয়াছি, আজ আর আমার কোনোমতেই ভুল হইবে না।” পথ অত্যন্ত জটিল ; তাহার শাখাপ্রশাখার অস্ত নাই— কোথাও এত সংকীর্ণ যে গুড়ি মারিয়া যাইতে হয়। বহু যত্নে মশাল ধরিয়া চলিতে চলিতে সন্ন্যাসী একটা গোলাকার ঘরের মতো জায়গায় আসিয়া পৌছিলেন। সেই ঘরের মাঝখানে একটা বৃহৎ ইদারা । মশালের আলোকে সন্ন্যাসী তাহার তল দেখিতে পাইলেন না। ঘরের ছাদ হইতে একটা মোট প্রকাগু লৌহখৃস্থল ইদারার মধ্যে নামিয়া গেছে। সন্ন্যাসী প্রাণপণ বলে ঠেলিয়া এই শৃঙ্খলটাকে অল্প একটুখানি নাড়াইবামাত্র ঠং করিয়া একটা শব্দ ইদারার গহবর হইতে উখিত হইয়া ঘরময় প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। সন্ন্যাসী উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “পাইয়াছি।” যেমন বলা আমনি সেই ঘরের ভাঙা ভিত্তি হইতে একটা পাথর গড়াইয়া পড়িল আর সেইসঙ্গে আর-একটি কী সচেতন পদার্থ ধপ, করিয়া পড়িয়া চিৎকার করিয়া উঠিল। সন্ন্যাসী এই অকস্মাং শব্দে চমকিয়া উঠিতেই তাহার হাত হইতে মশাল পড়িয়া নিবিয়া গেল । 영 সন্ন্যাসী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে।” কোনো উত্তর পাইলেন না। তখন অন্ধকারে হাতড়াইতে গিয়া তাহার হাতে একটি মানুষের দেহ ঠেকিল। তাহাকে নাড়া দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে তুমি।” ജ് কোনো উত্তর পাইলেন না। লোকটা অচেতন হইয়া গেছে । তখন চকমকি কিয়৷ কিয়া সন্ন্যাসী অনেক কষ্ট্রে মশাল ধরাইলেন। ইতিমধ্যে