পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وال والاثا পারিতে না ; কিন্তু আমি তন্ময় হইয়া ছিলাম, বাহিরের ঘটনা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিত না । “তাহার পরে, যাহা খুজিতেছিলাম আজ এইমাত্র তাহ আবিষ্কার করিয়াছি। এখানে যাহা আছে পৃথিবীতে কোনো রাজরাজেশ্বরের ভাণ্ডারেও এত ধন নাই । আর একটিমাত্র সংকেত ভেদ করিলেই সেই ধন পাওয়া যাইবে । “এই সংকেতটিই সর্বাপেক্ষা দুরূহ। কিন্তু এই সংকেতও আমি মনে মনে ভেদ করিয়াছি। সেইজন্তই পাইয়াছি বলিয়া মনের উল্লাসে চিৎকার করিয়া উঠিয়াছিলাম। যদি ইচ্ছা করি তবে আর-এক দণ্ডের মধ্যে সেই স্বর্ণমাণিক্যের ভাণ্ডারের মাঝখানে গিয়া দাড়াইতে পারি।” মৃত্যুঞ্জয় শংকরের পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, “তুমি সন্ন্যাসী, তোমার তো ধনের কোনো প্রয়োজন নাই— আমাকে সেই ভাণ্ডারের মধ্যে লইয়া যাও । আমাকে বঞ্চিত করিয়ে না।” *్క শংকর কহিলেন, “আজ আমার শেষ বন্ধন মুক্ত হইয়াছে। তুমি ওই-যে পাথর ফেলিয়া আমাকে মারিবার জন্য উদ্যত হইয়াছিলে, তাহার আঘাত আমার শরীরে লাগে নাই, কিন্তু তাহ আমার মোহাবরণকে ভেদ করিয়াছে। তৃষ্ণার করালমূর্তি আজ আমি দেখিলাম। আমার গুরু পরমহংসদেবের নিগৃঢ় প্রশাস্ত হাস্য এতদিন পরে আমার অস্তরের কল্যাণীপে অনির্বাণ আলোকশিখা জালাইয়া তুলিল।” মৃত্যুঞ্জয় শংকরের পা ধরিয়া পুনরায় কাতর স্বরে কহিল, “তুমি মুক্ত পুরুষ, আমি মুক্ত নহি, আমি মুক্তি চাহি না, আমাকে এই ঐশ্বৰ্ষ হইতে বঞ্চিত করিতে পরিবে না ।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “বংস, তবে তুমি তোমার এই লিখনটি লও। যদি ধন খুজিয়া লইতে পার তবে লইয়ো।” এই বলিয়। তাহার যষ্টি ও লিখনপত্র মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে রাখিয়া সন্ন্যাসী চলিয়৷ গেলেন। মৃত্যুঞ্জয় কহিল, “আমাকে দয়া করে, আমাকে ফেলিয়া যাইয়ে না— আমাকে দেখাইয়া দাও।” কোনো উত্তর পাইল না। তখন মৃত্যুঞ্জয় যষ্টির উপর ভর করিয়া হাতড়াইয়। স্বরঙ্গ হইতে বাহির হইবার চেষ্টা করিল। কিন্তু পথ অত্যস্ত জটিল, গোলকধাঁধার মতো, বারবার বাধা পাইতে লাগিল। অবশেষে ঘুরিয়া ঘুরিয়া ক্লান্ত হইয়া এক জায়গায় শুইয়া পড়িল এবং নিদ্রা আসিতে বিলম্ব হইল না।