পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€$by i রবীন্দ্র-রচনাবলী হইতে গোপন করিয়া চলিয়াছে। নিজে তাহদের নামে যে চিঠি লিখিত তাহ সাবধানে ডাকঘরে দিয়া আসিত এবং ডাকঘরের ঠিকানাতেই তাহার নামে চিঠি আসিত— প্রত্যহ সে নিজে গিয়া তাহ সংগ্ৰহ করিয়া আনিত । কালীপদর বাড়ির পরিচয় লইবার জন্য আর-একবার তাহার বাক্স খুলিতে হইল । তাহার বাক্সের মধ্যে দুইতাড়া চিঠি ছিল। প্রত্যেক তাড়াটি অতিযত্বে ফিতা দিয়া বাধা । একটি তাড়াতে তাহার মাতার চিঠি— আর একটিতে তাহার পিতার। মায়ের চিঠি সংখ্যায় অল্পই, পিতার চিঠিই বেশি। চিঠিগুলি হাতে করিয়া আনিয়া শৈলেন দরজা বন্ধ করিয়া দিল এবং রোগীর বিছানার পাশ্বে বসিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। চিঠিতে ঠিকানা পড়িয়াই একেবারে চমকিয়া উঠিল। শানিয়াড়ি, চৌধুরীবাড়ি, ছয় আনি ! নীচে নাম দেখিল, ভবানীচরণ দেবশৰ্মা । ভবানীচরণ চৌধুরী ! চিঠি রাখিয়া স্তব্ধ হইয়া বসিয়া সে কালীপদর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। কিছুদিন পূর্বে একবার তাহার সহচরদের মধ্যে কে একজন বলিয়াছিল, তাহার মুখের সঙ্গে কালীপদর মুখের অনেকটা আদল আসে। সে কথাটা তাহার শুনিতে ভালো লাগে নাই এবং অন্ত-সকলে তাহ একেবারে উড়াইয়া দিয়াছিল। আজ বুঝিতে পারিল, সে কথাটা অমূলক নহে। তাহার পিতামহরা দুই ভাই ছিলেন– স্যামাচরণ এবং ভবানীচরণ, এ কথা সে জানিত। তাহার পরবর্তীকালের ইতিহাস তাহাদের বাড়িতে কখনো আলোচিত হয় নাই। ভবানীচরণের ষে পুত্র আছে এবং তাহার নাম কালীপদ, তাহা সে জানিতই না। এই কালীপদ ! এই তাহার খুড়া ! শৈলেনের তখন মনে পড়িতে লাগিল, শৈলেনের পিতামহী, শ্যামাচরণের স্ত্রী যতদিন বাচিয়া ছিলেন, শেষ পর্যন্ত পরমস্নেহে তিনি ভবানীচরণের কথা বলিতেন। ভবানীচরণের নাম করিতে র্তাহার দুই চক্ষে জল ভরিয়া উঠিত। ভবানীচরণ র্তাহার দেবর বটে, কিন্তু তাহার পুত্রের চেয়ে বয়সে ছোটো— তাহাকে তিনি আপন ছেলের মতোই মানুষ করিয়াছেন। বৈষয়িক বিপ্লবে যখন তাহারা স্বতন্ত্র হইয়া গেলেন, তখন ভবানীচরণের একটু খবর পাইবার জন্য র্তাহার বক্ষ তৃষিত হইয়া থাকিত। তিনি বারবার তাহার ছেলেদের বলিয়াছেন, ‘ভবানীচরণ নিতান্ত অবুঝ ভালোমানুষ বলিয়া নিশ্চয়ই তোরা তাহাকে ফাকি দিয়াছিল— আমার শ্বশুর তাহাকে এত ভালোবাসিতেন, তিনি যে তাহাকে বিষয় হইতে বঞ্চিত করিয়া যাইবেন এ কথা আমি বিশ্বাস করিতে পারি না।’ তাহার ছেলের এ-সব কথায় অত্যন্ত বিরক্ত হইত এবং শৈলেনের মনে পড়িল সে’ও তাহার পিতামহীর উপর অত্যন্ত রাগ করিত। এমনকি, পিতামহী