পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

858 রবীন্দ্র-রচনাবলী দাদার কাছে রসিক আর-কিছু চাহিবে না পণ করিয়াছিল কিন্তু সে পণ রক্ষা হইল না। তবে চাওয়াটার কিছু বেশ-পরিবর্তন করিয়া দিল। কহিল, “আমাকে একশো পচিশ টাকা ধার দিতে হইবে।” বংশীর কাছে রসিক কিছুদিন হইতে কোনো আবদার করে নাই, ইহাতে শরীরের অসুখের উপর আর-একটা গভীরতর বেদনা বংশীকে দিনরাত্রি পীড়া দিতেছিল । তাই রসিক তাহার কাছে দরবার উপস্থিত করিবামাত্রই মুহূর্তের জন্য বংশীর মন নাচিয়া উঠিল ; মনে হইল, দূর হোক গে ছাই, এমন করিয়া আর টানাটানি করা যায় না— দিয়া ফেলি।” বিস্তু বংশ ? সে যে একেবারেই ডোবে | একশো পচিশ টাকা দিলে আর বাকি থাকে কী। ধার! রসিক একশো পচিশ টাকা ধার শুধিবে । তাই যদি সম্ভব হইত তবে তো বংশী নিশ্চিন্ত হইয়া মরিতে পারিত। বংশী মনটাকে একেবারে পাথরের মতো শক্ত করিয়া বলিল, “সে কি হয়, একশো পচিশ টাকা আমি কোথায় পাইব ।” রসিক বন্ধুদের কাছে বলিল, “এ টাকা যদি না পাই তবে আমি বিবাহ করিবই না।” বংশীর কানে যখন সে কথা গেল তখন সে বলিল, “এও তো মজা মন্দ নয়। পাত্রীকে টাকা দিতে হইবে অাবার পাত্রকে না দিলেও চলিবে না। এমন দায় তো আমাদের সাত পুরুষের মধ্যে কখনো ঘটে नांझे ।” রসিক সুস্পষ্ট বিদ্রোহ করিয়া তাতের কাজ হইতে অবসর লইল। জিজ্ঞাসা করিলে বলে, আমার অসুখ করিয়াছে। র্তীতের কাজ না করা ছাড়া তাহার আহারবিহারে অমুখের অন্ত কোনো লক্ষণ প্রকাশ পাইল না। বংশী মনে মনে একটু অভিমান করিয়া বলিল, “থাক, উহাকে আমি আর কখনো কাজ করিতে বলিব না’— বলিয়া রাগ করিয়া নিজেকে আরো বেশি কষ্ট দিতে লাগিল। বিশেষত সেই বছরেই বয়কটের কল্যাণে হঠাৎ তীতের কাপড়ের দর এবং আদর অত্যন্ত বাড়িয়া গেল। তাতিদের মধ্যে যাহারা অন্ত কাজে ছিল তাহারা প্রায় সকলে তাতে ফিরিল। নিয়তচঞ্চল মাকুগুলা ইদুর-বাহনের মতো সিদ্ধিদাতা গণনায়ককে বাংলাদেশের উাতির ঘরে দিনরাত কাধে করিয়া দৌড়াইতে লাগিল। এখন এক মুহূর্ত তাত কামাই পড়িলে বংশীর মন অস্থির হইয়া উঠে ; এই সময়ে রসিক যদি তাহার সাহায্য করে তবে দুই বৎসরের কাজ ছয় মাসে আদায় হইতে পারে, কিন্তু সে আর ঘটিল না। কাজেই ভাঙা শরীর লইয়া বংশী একেবারে সাধ্যের অতিরিক্ত পরিশ্রম করিতে লাগিল । 轉 میایی রসিক প্রায় বাড়ির বাহিরে বাহিরেই কাটায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন যখন সন্ধ্যার