পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী আরবদেশে তারা শ্রদ্ধা পান নি। আমি একে বললেম, একদিন কবিতায় লিখেছি "ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেঙ্কুয়িন’— আজ আমার হৃদয় বেঙ্কুয়িন-হৃদয়ের অত্যস্ত কাছে এসেছে, যথার্থই আমি তাদের সঙ্গে এক অন্ন খেয়েছি অস্তরের মধ্যে । তার পরে যখন আমাদের মোটর চলল, দুই পাশের মাঠে এদের ঘোড়সওয়াররা ঘোড়া ছোটাবার খেলা দেখিয়ে দিলে। মনে হল মরুভূমির ঘূর্ণ-হাওয়ার দল শরীর নিয়েছে। বোধ হচ্ছে আমার ভ্রমণ এই আরব বেঙ্কুয়িনে এসেই শেষ হল। দেশে যাত্রা করবার আর দু-তিন দিন বাকি, কিন্তু শরীর এত ক্লাস্ত যে এর মধ্যে আর-কোনো দেখাশোনা চলবে না। তাই এই মরুভূমির বন্ধুত্বের মধ্যে ভ্রমণের উপসংহারট। ভালোই লাগছে। অামার বেঙ্কুয়িন নিমন্ত্রণকর্তাকে বললুম যে, বেঙ্কুয়িন-আতিথ্যের পরিচয় পেয়েছি, কিন্তু বেদুয়িন-দস্থ্যতার পরিচয় না পেলে তো অভিজ্ঞতা শেষ করে যাওয়া হবে না। তিনি হেসে বললেন, তার একটু বাধা আছে। আমাদের দস্থ্যর প্রাচীন জ্ঞানীলোকদের গায়ে হস্তক্ষেপ করে না । এইজন্তে মহাজনরা যখন আমাদের মরুভূমির মধ্যে দিয়ে পণ্য নিয়ে আসে তখন অনেক সময় বিজ্ঞ চেহারার প্রবীণ লোককে উটের পরে চড়িয়ে তাদের কর্তা সাজিয়ে আনে। আমি তাকে বললুম, চীনে ভ্রমণ করবার সময় আমার কোনো চৈনিক বন্ধুকে বলেছিলেম, ‘একবার চীনের ডাকাতের হাতে ধরা পড়ে আমার চীনড্রমণের বিবরণটাকে জমিয়ে তুলতে ইচ্ছা করে।’ তিনি বললেন, ‘চীনের ডাকাতেরা আপনার মতো বৃদ্ধ কবির পরে অত্যাচার করবে না, তারা প্রাচীনকে ভক্তি করে । সত্তর বছর বয়সে যৌবনের পরীক্ষা চলবে না। নানা স্থানে ঘোর শেষ হল, বিদেশীর কাছ থেকে কিছু ভক্তি নিয়ে, শ্রদ্ধা নিয়েই দেশে ফিরে যাব, তার পরে আশা করি কর্মের অবসানে শান্তির অবকাশ আসবে । যুবকে যুবকে দ্বন্দ্ব ঘটে, সেই দ্বন্দ্বের আলোড়নে সংসারপ্রবাহের বিকৃতি দূর হয়। দস্থ্য যখন বুদ্ধকে ভক্তি করে তখন সে তাকে আপন জগং থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যুবকের সঙ্গেই তার শক্তির পরীক্ষা, সেই দ্বন্দ্বের আঘাতে শক্তি প্রবল থাকে, অতএব ভক্তির সুদূর অন্তরালে পঞ্চাশোধ্বং বনং ব্রজেং ।