পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় ৫২৩ কবিষশের কোনো দাবি যদি আমার থাকে তবে তার উদ্ভব হল সেই মৌন নিঃসীমতায় যেখান দিয়ে মানবহৃদয়ের মহাদেশে অনুপ্রেরণা ও ভাবম্পন্দনের প্রাণময় আদান-প্রদান চলতে থাকে । শৈশব থেকেই আমি মানুষ হয়েছি নির্জনতার আবহাওয়ায়, প্রকৃতির নিবিড় সংস্পর্শে। তার থেকে অনুপ্রেরণা যত পেয়েছি, আমার স্বপ্নে ও কল্পস্থষ্টিতে প্রতিদানও দিয়েছি তেমনি । নিয়তির দুর্বোধ্যলীলায় এই নিঃসঙ্গ কবিকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল এশিয়া ও পশ্চিমমহাদেশের বড়ো বড়ো দেশগুলিতে সহস্ৰ লোকচক্ষুর উজ্জল দৃষ্টির মাঝখানে। তথাপি সে-সব জায়গায় যে-সকল বাণী ও যে-সমস্ত অভিভাষণ অামাকে দিতে হয়েছিল আমার সত্যিকারের ভাষা সেখানকার নয়, সে আছে আমার স্বষ্টিনিরত আত্মার গভীরে— যেখানে আমার চিন্তারাজি বাক্য হারিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে সেইখানে । যদি আজ আপনাদের দেশে না আসতাম তবে আমার তীর্থযাত্রা অসম্পূর্ণ থেকে যেত। আজ আপনাদের দেখা পেয়ে নির্মল আনন্দে আমার জীবনের এই সন্ধ্যা কানায় কানায় ভরে উঠেছে। যে প্রেমস্থত্রের নিদর্শন আজকের এই সভা, সেই প্রেমস্থত্রে প্রাচ্যের এই দুটি প্রাচীন সভ্যতাকে মিলিত করতে পেরে আজ আমি ধন্য । কবির সংবর্ধন-ভোজের অন্তে বুশেয়ারের গবর্নরের বক্তৃতা জনাব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচ্যাকাশের উজ্জ্বলতম তারা ; তার মনীষার দীপ্তি শুধু এশিয়া মহাদেশকে নয়, সমস্ত বিশ্বকে আলোকিত করেছে । আজ যে তিনি পারস্যদেশে পদার্পণ করেছেন, এতে আমাদের দেশ গৌরবান্বিত হল। পুরাকালে ভারতবর্ষ ও পারস্যদেশ পরস্পরের কাছাকাছি এসেছিল ; ধর্ম শিল্প এবং আরো অনেক উপায় অবলম্বন করে তারা পরস্পরকে অনুপ্রাণিত করেছিল । সেই নিবিড় আত্মীয়তায় দুটি দেশেরই প্রচুর লাভ ; সেটাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রকৃষ্ট উপায় হচ্ছে এই মহাপুরুষের আমাদের দেশে পদার্পণ। আজ র্তার আগমনে সমস্ত ইরানদেশে একটা সাড়া পড়ে গেছে ; আমরা সকলেই একান্ত কামনা করি, তার এই ভ্রমণে যেন তিনি আনন্দলাভ করেন, আমাদের মধ্যে যা-কিছু সত্য, যা-কিছু ভালো আছে, আমাদের দেশে ভ্রমণ ও অবস্থান -কালে তাই দিয়ে যেন আমরা তাকে খুশি করতে পারি। কৰির উত্তর চিস্তাসমৃদ্ধ এই প্রাচীন দেশের প্রতি আমি চিরকালই অন্তরে গভীর শ্রদ্ধা পোষণ করে এসেছি ; এই দেশ দেখা এবং এ দেশের অধিবাসীদের পরিচয় লাভ করাটা আমার