পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

t)్ఫట్ర রবীন্দ্র-রচনাবলী জয়সিংহ অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া রছিলেন । কল্য রাত্রি হইতে উাহার মনেও এমন অনেক কথা তোলপাড় হইয়াছে । অবশেষে বলিলেন, “আমি মায়ের স্বমুখে শুনিয়াছি—এ বিষয়ে আর কোনো সংশয় থাকিতে পারে না । তিনি স্বয়ং বলিয়াছেন, তিনি মহারাজের রক্ত চান ।” বলিয়া জয়সিংহ প্রভাতের মন্দিরের ঘটনা রাজাকে বলিলেন । রাজা হাসিয়া বলিলেন, “এ তে মায়ের আদেশ নয়, এ রঘুপতির আদেশ । রঘুপতিই অন্তরাল হইতে তোমার কথার উত্তর দিয়াছিলেন ।” রাজার মূপে এই কথা শুনিয়া জয়সিংহ একেবারে চমকিয়া উঠিলেন । তাহার মনেও এইরূপ সংশয় এক বার চকিতের মতো উঠিয়াছিল, কিন্তু আবার বিদ্যুতের মতো অস্তহিত হইয়াছিল । রাজার কথায় সেই সন্দেহে আবার আঘাত লাগিল । জয়সিংহ অত্যস্ত কাতর হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “না মহারাজ, আমাকে ক্রমাগত ংশয় হইতে সংশয়ান্তরে লইয়া যাইবেন না—আমাকে তীর হইতে ঠেলিয়া সমুদ্রে ফেলিবেন না—আপনার কথায় আমার চারিদিকের অন্ধকার কেবল বাড়িতেছে । আমার যে বিশ্বাস যে ভক্তি ছিল, তাই থাকৃ—তাহার পরিবর্তে এ কুয়াশা আমি চাই না । মায়ের আদেশই হউক আর গুরুর আদেশই হউক, সে একই কথা— আমি পালন করিব।” বলিয়া বেগে উঠিয়া তাহার তলোয়ার খুলিলেন—তলোয়ার রৌদ্রকিরণে বিদ্যুতের মতো চকমক করিয়া উঠিল । ইহা দেখিয়া গ্রুব উধ্বস্বরে কাদিয়া উঠিল, তাহার ছোটো দুইটি হাতে রাজাকে জড়াইয়া রাজাকে প্রাণপণে আচ্ছাদন করিয়া ধরিল—রাজা জয়সিংহের প্রতি লক্ষ্য না করিয়া ধ্রুবকেই বক্ষে চাপিয়া ধরিলেন । জয়সিংহ তলোয়ার দূরে ফেলিয়া দিলেন। গ্রুবের পিঠে হাত বুলাইয়া বলিলেন, “কোনো ভয় নেই বৎস, কোনো ভয় নেই। আমি এই চলিলাম, তুমি ঐ মহৎ আশ্রয়ে থাকে, ঐ বিশাল বক্ষে বিরাজ করো–তোমাকে কেহ বিচ্ছিন্ন করিৰে না ।” বলিয়া রাজাকে প্রণাম করিয়া প্রস্থান করিতে উষ্ঠত হইলেন । সহসা আবার কী ভাবিয়া ফিরিয়া কছিলেন, “মহারাজকে সাবধান করিয়া দিই, আপনার ভ্রাতা নক্ষত্র রায় আপনার বিনাশের পরামর্শ করিয়াছেন । ২৯শে জাৰাঢ় চতুর্দশ দেবতার পূজার রাত্রে আপনি সতর্ক থাকিবেন।" | রাজা হাসিয়া কহিলেন, “নক্ষত্র কোনো মতেই আমাকে বধ করিতে পারিৰে মা, সে আমাকে ভালোবাসে।” জয়সিংহ বিদায় লইয়া গেলেন। রাজা এবের দিকে চাহিয়া ভক্তিভাবে কছিলেন, “তুমিই আজ রক্তপাত হইতে