পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8. У о রবীন্দ্র-রচনাবলী চতুর্দশ পরিচ্ছেদ তাহার পরদিন ২৯শে আষাঢ়। আজ রাত্রে চতুর্দশ দেবতার পূজা। জাজ প্রভাতে তালবনের আড়ালে স্থধ যখন উঠিতেছে, তখন পূর্ব দিকে মেঘ নাই । কনককিরণপ্লাবিত আনন্দমগ্ন কাননের মধ্যে গিয়া জয়সিংহ যখন বলিলেন তখন র্তাহার পুরাতন স্থতিসকল মনে উঠিতে লাগিল। এই বনের মধ্যে এই পাষাণমন্দিরের পাষাণ-সোপানাবলীর মধ্যে, এই গোমতী-তীরে সেই বৃহৎ বটের ছায়ায়, সেই ছায়া-দিয়া-ঘেরা পুকুরের ধারে তাহার বাল্যকাল স্বমধুর স্বপ্নের মতো মনে পড়িতে লাগিল। ষে সকল মধুর দৃপ্ত তাহার বাল্যকালকে সস্নেহে বিরিয়া থাকিত তাহারা আজ হাসিতেছে, তাহাকে আবার আহবান করিতেছে, কিন্তু তাহার মন বলিতেছে, “আমি যাত্রা করিয়া বাহির হইয়াছি, আমি বিদায় লইয়াছি, আমি আর ফিরিব না।” শ্বেত পাষাণের মন্দিরের উপর স্বৰ্যকিরণ পড়িয়াছে এবং তাহার বাম দিকের ভিত্তিতে বকুলশাখার কম্পিত ছায়া পড়িয়াছে। ছেলেবেলায় এই পাষাণ-মন্দিরকে যেমন সচেতন বোধ হইত—এই সোপানের মধ্যে একলা বসিয়া যখন খেলা করিতেন, তখন এই সোপানগুলির মধ্যে যেমন সঙ্গ পাইতেন, আজ প্রভাতের স্বর্বকিরণে মন্দিরকে তেমনি সচেতন, তাহার সোপানগুলিকে তেমনি শৈশবের চক্ষে দেখিতে লাগিলেন ; মন্দিরেব ভিতরে মাকে আজ আবার মা বলিয়া মনে হইতে লাগিল। কিন্তু অভিমানে তাহার হৃদয় পুরিয়া গেল, তাহার দুই চক্ষু ভাসিয়া জল পড়িতে লাগিল । রঘুপতিকে আসিতে দেখিয়া জয়সিংহ চোখের জল মুছিয়া ফেলিলেন। গুরুকে প্ৰণাম করিয়া দাড়াইলেন। রঘুপতি কহিলেন, “আজ পূজার দিন। মায়ের চরণ ম্পর্শ করিয়া কী শপথ করিয়াছিলে মনে আছে ?” জয়সিংহ কহিলেন, “আছে ।” রঘুপতি। “শপথ পালন করিবে তো ?” জয়সিংহ । -হঁ।” রঘুপতি। “দেখিয়ো বৎস, সাবধানে কাজ করিয়ো । বিপদের আশঙ্কা আছে। আমি তোমাকে রক্ষা করিবার জন্তই প্রজাদিগকে রাজার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিয়াছি ।” জয়সিংহ চুপ করিয়া রঘুপতির মুখের দিকে চাহিয়া রছিলেন, কিছুই উত্তর