পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२९ রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা তাহার কথার কোনো উত্তর না দিয়া কহিলেন, “আমার রাজ্যের নিয়ম এই—যে ব্যক্তি দেবতার উদ্দেশে জীব বলি দিবে বা দিতে উদ্যত হইবে, তাহার নির্বাসনদও । সেই দণ্ড আমি তোমার প্রতি প্রয়োগ করিলাম । আট বৎসরের জন্ত তুমি নির্বাসিত হইলে । প্রহরীরা তোমাকে আমার রাজ্যের বাহিরে রাখিয়া আসিবে ।” প্রহরীরা রঘুপতিকে সভাগৃহ হইতে লইয়া যাইতে উম্ভত হইল। রঘুপতি তাহাদিগকে কহিলেন, “স্থির হও।” রাজার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “তোমার বিচার শেষ হইল, এখন আমি তোমার বিচার করিব, তুমি অবধান করো। চতুর্দশ দেবতা পূজার দুই রাত্রে যে কেহ পথে বাহির হইবে, পুরোহিতের কাছে সে দণ্ডিত হইবে, এই আমাদের মন্দিরের নিয়ম। সেই প্রাচীন নিয়ম অনুসারে তুমি আমার নিকটে দণ্ডার্হ ।” রাজা কহিলেন, “আমি তোমার দণ্ড গ্রহণ করিতে প্রস্তুত আছি।” সভাসদেরা কহিলেন, “এ অপরাধের কেবল অর্থদও হইতে পারে।” পুরোহিত কহিলেন, “আমি তোমার দুই লক্ষ মুদ্রা দণ্ড করিতেছি। এখনি দিতে হইবে।” রাজা কিয়ংক্ষণ ভাবিলেন—পরে বলিলেন, “তথাস্তু।” কোষাধ্যক্ষকে ভাকিয়া দুই লক্ষ মুদ্র আদেশ করিয়া দিলেন। প্রহরীরা রঘুপতিকে বাহিরে লইয়া গেল। রঘুপতি চলিয়া গেলে নক্ষত্র রায়ের দিকে চাহিয়া রাজা দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “নক্ষত্র রায় তোমার অপরাধ তুমি স্বীকার কর কি না।” নক্ষত্র রায় বলিলেন, “মহারাজ, আমি অপরাধী, আমাকে মার্জন করুন।” বলিয়া ছুটিয়া আসিয়া রাজার পা জড়াইয়া ধরিলেন । মহারাজ বিচলিত হইলেন–কিছু ক্ষণ বাক্যস্ফর্তি হইল না। অবশেষে আত্মসংবরণ করিয়া বলিলেন, “নক্ষত্র রায়, ওঠে, আমার কথা শোনো । আমি মার্জন করিবার কে । আমি আপনার শাসনে আপনি বদ্ধ। বন্দীও যেমন বন্ধ, বিচারকও তেমনি বদ্ধ। একই অপরাধে আমি এক জনকে দও দিব, এক জনকে মার্জনা করিব, এ কী করিয়া হয়। তুমিই বিচার করে।” সভাসদের বলিয়া উঠিলেন, “মহারাজ, নক্ষত্র রায় আপনার ভাই, আপনার ভাইকে মার্জন করুন।” H. রাজা দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “তোমরা সকলে চুপ করে। যত ক্ষণ আমি এই আসনে আছি, তত ক্ষণ আমি কাহারও ভাই নহি, কাহারও বন্ধু নহি ।”