পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9\9e. রবীন্দ্র-রচনাবলী লাগিল নক্ষত্র রায় তাহাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে। নক্ষত্র রায়ের সরল স্বন্দর মুখ শতবার তাহার স্নেহচক্ষের সম্মুখে দেখিতে লাগিলেন এবং সেই সঙ্গেই মনে হইতে লাগিল, সেই নক্ষত্র রায় কতকগুলো সৈন্ত সংগ্ৰহ করিয়া তলোয়ার হাতে লইয়া র্তাহাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে। এক-এক বার তাহার মনে মনে ইচ্ছা করিতে লাগিল—একটি সৈন্যও না লইয়া নক্ষত্র রায়ের সম্মুখে বৃহৎ রণ-ক্ষেত্রে এক দাড়াইয়া সমস্ত বক্ষস্থল অবারিত করিয়া নক্ষত্র রায়ের সহস্র সৈনিকের তরবারি এক কালে র্তাহার হৃদয়ে গ্রহণ করেন । তিনি ধ্রুবকে কাছে টানিয়া বলিলেন, "ধ্ৰুব, তুইও কি এই মুকুটখানার জন্য আমার সঙ্গে ঝগড়া করিতে পারিস। বলিয়া মুকুট ভূমিতে ফেলিয়া দিলেন, একটি বড়ো মুক্ত ছিড়িয়া পড়িয়া গেল । ধ্রুব আগ্রহের সহিত হাত বাড়াইয়া কহিল, “আমি নেব।” রাজা ধ্রুবের মাথায় মুকুট পরাইয়া তাহাকে কোলে লইয়া কহিলেন, “এই লও— আমি কাহারও সহিত ঝগড়া করিতে চাই না ।” বলিয়া অত্যস্ত আবেগের সহিত ধ্রুবকে বুকে চাপিয়া ধরিলেন। তাহার পরে সমস্ত দিন ধরিয়া "এ কেবল আমারই পাপের শাস্তি" বলিয়া রাজা নিজের সহিত তর্ক করিতে লাগিলেন । নহিলে ভাই কখনো ভাইকে আক্রমণ করে না। ইহা মনে করিয়া তাহার কথঞ্চিং সাস্বনা হইল। তিনি মনে করিলেন, ইহা ঈশ্বরের বিধান । জগৎপতির দরবার হইতে আদেশ জাসিয়াছে, ক্ষুত্র নক্ষত্র রায় কেবল তাহার মানবহৃদয়ের প্ররোচনায় তাহা লঙ্ঘন করিতে পারে না। এই মনে করিয়া তাহার আহত স্নেহ কিছু শাস্তি পাইল । পাপ তিনি নিজের স্বন্ধে লইতে রাজি আছেন—নক্ষত্র রায়ের পাপের ভার যেন তাহাতে কতকটা কমিয়া যায়। বিৰন আসিয়া কহিলেন, “মহারাজ, এ সময় কি আকাশের দিকে তাকাইয়া ভাবিবার সময় ।” রাজা কহিলেন, “ঠাকুর, এ সকল আমারই পাপের ফল ।” বিম্বন কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “মহারাজ, এই সকল কথা শুনিলে আমার ধৈৰ্ব থাকে না। দুঃখ যে পাপেরই ফল তাহা কে বলিল, পুণ্যের ফলও হইতে পারে। কত ধর্মাত্মা আজীবন দুঃখে কাটাইয়া গিয়াছেন।” রাজা নিরুত্তর হইয়া রছিলেন । o: বিয়ন, জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ কী পাপ করিয়াছিলেন বাহার ফলে এই ঘটনা ঘটিল ?”