পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\S)br Nq রবীন্দ্র-রচনাবলী বিবাহের পর রাজলক্ষ্মী মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিলেন, “আমি বলি, এখন বউমা কিছুদিন তার মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কোন মা।” মা কহিলেন, “এবারে তোমার একজামিন আছে, পড়াশুনার ব্যাঘাত হইতে পারে।” মহেন্দ্র। আমি কি ছেলেমানুষ। নিজের ভালোমন্দ বুঝে চলিতে পারি না ? রাজলক্ষ্মী। তা হােক-না বাপু, আর-একটা বৎসর বৈ তো নয়। মহেন্দ্ৰ কহিল, “বউয়ের বাপ-মা যদি কেহ থাকিতেন, তাহাদের কাছে পাঠাইতে আপত্তি ছিল না- কিন্তু জেঠার বাড়িতে আমি উহাকে রাখিতে পারিব না।” রাজলক্ষ্মী। (আত্মগত) ওরে বাস রে! উনিই কর্তা, শাশুড়ি কেহ নয়! কাল বিয়ে করিয়া আজই এত দরদ ! কর্তারা তো আমাদেরও একদিন বিবাহ করিয়াছিলেন, কিন্তু এমন স্ত্ৰৈণতা, এমন বেহায়াপনা তো তখন ছিল না ! মহেন্দ্র খুব জোরের সহিত কহিল, “কিছু ভাবিয়ো না মা। একজামিনের কোনো ক্ষতি হইবে না।” 8 রাজলক্ষ্মী তখন হঠাৎ অপরিমিত উৎসাহে বধূকে ঘরকন্নার কাজ শিখাইতে প্ৰবৃত্ত হইলেন। শোয়াইয়া তাহার আত্মীয়বিচ্ছেদের ক্ষতিপূরণ করিতে লাগিলেন। অন্নপূর্ণ অনেক বিবেচনা করিয়া বােনঝির নিকট হইতে দূরেই থাকিতেন। যখন কোনো প্ৰবল অভিভাবক একটা ইক্ষুদণ্ডের সমস্ত রস প্রায় নিঃশেষপূর্বক চর্বণ করিতে হইল। ঠিক তাহার চােখের সম্মুখেই নবযৌবনা নববধূর সমস্ত মিষ্টরস যে কেবল ঘরকন্নার দ্বারা পিষ্ট হইতে থাকিবে, ইহা কি সহ্য হয় । মহেন্দ্ৰ অন্নপূর্ণাকে গিয়া কহিল, “কাকী, মা বউকে যেরূপ খাটাইয়া মারিতেছেন, আমি তো তাহা দেখিতে পারি না ।” অন্নপূর্ণা জানিতেন রাজলক্ষ্মী বাড়াবাড়ি করিতেছেন, কিন্তু বলিলেন, “কেন মহিন, বউকে ঘরের কাজ শেখানো হইতেছে, ভালোই হইতেছে। এখনকার মেয়েদের মতো নভেল পড়িয়া, কাপেট বুনিয়া, হউক আর মন্দই হউক। আমার স্ত্রী যদি আমারই মতো নভেল পড়িয়া রস গ্রহণ করিতে পারে, তবে তাহাতে পরিতাপ বা পরিহাসের বিষয় কিছুই দেখি না।” অন্নপূর্ণার ঘরে পুত্রের কণ্ঠস্বর শুনিতে পাইয়া রাজলক্ষ্মী সব কর্ম ফেলিয়া চলিয়া আসিলেন। তীব্ৰকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী ! তোমাদের কিসের পরামর্শ চলিতেছে।” মহেন্দ্ৰ উত্তেজিতভাবেই বলিল, “পরামর্শ কিছু নয় মা, বউকে ঘরের কাজে আমি দাসীর মতো शठिंबाऊ नि(ऊ •द्वित्र न् ।।” মা তাহার উদ্দীপ্ত জ্বালা দমন করিয়া অত্যন্ত তীক্ষা ধীর ভাবে কহিলেন, “তঁহাকে লইয়া কী করিতে হইবে।” রাজলক্ষ্মী কিছু না কহিয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন ও মুহূর্তপরে বধূর হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া মহেন্দ্রের সম্মুখে স্থাপিত করিয়া কহিলেন, “এই লও, তোমার বধূকে তুমি লেখাপড়া শেখাও।” এই বলিয়া অন্নপূর্ণার দিকে ফিরিয়া গলবস্ত্ৰ-জোড়করে কহিলেন, “মাপ করো মেজোগিন্নি, মাপ