পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ @Q@ অক্ষয়। ঐ তো! বই পড়ে পড়ে চোখ কানা করলে— পৃথিবীর আকর্ষণে উল্কাপাত কী করে ঘটে সে-সমস্ত লাখ দু-লাখ ক্রোশের খবর রাখ, আর আজ ১৮ নম্বর মধুমিস্ত্রির গলিতে কার আকর্ষণে কে এসে পড়ছে সেটা অনুমান করতেও পারলে না! নীরবালা। বুঝেছি ভাই সেজদিদি !—বলিয়া নৃপর পিঠে একটা চাপড় মারিল এবং তাহার কানের কাছে মুখ রাখিয়া অল্প একটু গলা নামাইয়া কহিল, “তোর বর আসছে ভাই, তাই সকালবেলা আমার বা চোখ নাচছিল।” নৃপ তাহাকে ঠেলিয়া দিয়া কহিল, “তোর বা চােখ নাচলে আমার বর আসবে কেন ?” নীরু কহিল, “তা ভাই, আমার বা চোখটা নাহয় তোর বরের জন্যে নোচে নিলে তাতে আমি দুঃখিত নই। কিন্তু মুখুজ্যোমশায়, জলখাবার তো দুটি লোকের জন্যে দেখলুম, সেজদিদি কি স্বয়ম্বর হবে না কি ?” অক্ষয় । আমাদের ছোড়দিদিও বঞ্চিত হবেন না। নীরবালা । আহা মুখুজ্যোমশায়, কী সুসংবাদ শোনালে! তোমাকে কী বকশিশ দেব। এই নাও আমার গলার হার, আমার দু-হাতের বালা । শৈল ব্যস্ত হইয়া বলিল, “আঃ ছিঃ, হাত খালি করিস নে ৷” নীরবালা। আজ আমাদের বরের অনারে পড়ার ছুটি দিতে হবে মুখুজ্যোমশায়। নৃপবালা। আঃ কী বর-বর করছিস। দেখো তো ভাই মেজদিদি ! অক্ষয় । ওকে ঐজন্যেই তো বর্বরা নাম দিয়েছি। অয়ি বর্বরে, ভগবান তোমাদের কটি সহােদরাকে এই একটি অক্ষয় বর দিয়ে রেখেছেন তবু তৃপ্তি নেই ? নীরবালা । সেইজন্যেই তো লোভ আরো বেড়ে গেছে । নূপ তাহার ছোটাে বোনকে সংযত করা অসাধ্য দেখিয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া চলিল। নীরু চলিতে চলিতে দ্বারের নিকট হইতে মুখ ফিরাইয়া কহিল, “এলে খবর দিয়ে মুখুজ্যোমশায়, ফাকি দিয়ে না। দেখিছ তো সেজদিদি কিরকম চঞ্চল হয়ে উঠেছে।” সহাস্য সস্নেহে দুই বোনকে নিরীক্ষণ করিয়া শৈল কহিল, “মুখুজ্যোমশায়, আমি ঠাট্টা করছি নে— আমি চিরকুমার-সভার সভ্য হব। কিন্তু আমার সঙ্গে পরিচিত একজন কাউকে চাই তো । তোমার বুঝি আর সভ্য হবার জো নেই ?” অক্ষয় | না, আমি পাপ করেছি। তোমার দিদি আমার তপস্যা ভঙ্গ করে আমাকে স্বাগ হতে বঞ্চিত করেছেন । শৈল | তা হলে রসিকদাদাকে ধরতে হচ্ছে। তিনি তো কোনো সভার সভ্য না হয়েও অক্ষয়। সভ্য হলেই এই বুড়োবয়সে ব্ৰতটি খোওয়াবেন । ইলিশ মাছ আমনি দিব্যি থাকে, ধরলেই মারা যায়— প্ৰতিজ্ঞাও ঠিক তাই, তাকে বাধলেই তার সর্বনাশ | এমন সময়, সম্মুখের মাথায় টাক, পাকা গোফ, গৌরবর্ণ, দীর্ঘাকৃতি, রসিকদাদা আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অক্ষয় তাহাকে তাড়া করিয়া গেল ; কহিল, “ওরে পাষণ্ড, ভণ্ড, অকালকুষ্মাণ্ড!” রসিক প্রসারিত দুই হস্তে তাহাকে সংবরণ করিয়া কহিলেন, “কোন হে, মত্তমন্থর কুঞ্জকুঞ্জর পুঞ্জ-অঞ্জনবৰ্ণ !” অক্ষয়। তুমি আমার শ্যালীপুষ্পবনে দাবানল আনতে চাও ? শৈল । রসিকদাদা, তোমারই বা তাতে কী লাভ ? আমারই দোষ দেন কেন ? বলেন, দু-বেলা বসে বসে কেবল খােচ্ছ, মেয়েদের জন্যে দুটাে বর দেখে দিতে পার না! আচ্ছা ভাই, আমি না খেতে রাজি আছি, তা হলেই বর জুটবে।-- না তোর বোনদের বয়স কমতে থাকবে ? এ দিকে যে দুটির বর জুটছে না। তারা তো দিব্যি খাচ্ছেন—দাচ্ছেন। শৈল ভাই,