পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ こと রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী তখন নল-নীল-অঙ্গদকে তো কেউ পোছেও নি!” অক্ষয় গর্জন করিয়া কহিলেন, “ওরে পোড়ারমুখী, ত্রেতাযুগের পোড়ারমুখোকে ছাড়া আর কোনো উপমাও তোর মনে উদয় হল না ? এত প্ৰেম !” শৈলবালা কহিল, “ই গো, এতই প্ৰেম !” অক্ষয় ভৈরোতে গাহিয়া উঠিলেন-- “ পোড়া মনে শুধু পোড়া মুখখানি জাগে রে! এত আছে লোক, তবু পোড়া চোখে আর কেহ নাহি লাগে রে ! আচ্ছা, তাই হবে! পঙ্গপাল কটাকে শিখার কাছে তাড়িয়ে নিয়ে আসব। তা হলে চট করে আমাকে একটা পান এনে দাও । তোমার স্বহস্তের রচনা !” শৈলী। কেন দিদির হস্তের— অক্ষয়। আরে, দিদির হস্ত তো জোগাড় করেইছি, নইলে পাণিগ্রহণ কী জন্যে ? এখন অন্য পদ্মহস্তগুলির প্রতি দৃষ্টি দেবার অবকাশ পাওয়া গেছে। : শৈল। আচ্ছা গো মশায় ! পদ্মহস্ত তোমার পানে এমনি চুন মাখিয়ে দেবে যে, পোড়ার মুখ আবার পুড়বে। অক্ষয় গাহিলেন- যারে মরণ দশায় ধরে সে যে শতবার করে মারে । পোড়া পতঙ্গ যত পোড়ে তত আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে। শৈলী। মুখুজ্যোমশায়, ও কাগজের গোলাটা কিসের ? অক্ষয়। তোমাদের সেই সভ্য হবার আবেদনপত্র এবং প্রবেশিকার দশ টাকার নোট পকেটে ছিল, ধোবা বেটা কেচে এমনি পরিষ্কার করে দিয়েছে, একটা অক্ষরও দেখতে পাচ্ছি নে। ও বেটা বোধ হয় স্ত্রীস্বাধীনতার ঘোরতর বিরোধী, তাই তোমার ঐ পত্রটা একেবারে আগাগোড়া সংশোধন করে দিয়েছে। i শৈল। এই বুঝি ! অক্ষয়। চারটিতে মিলে স্মরণশক্তি জুড়ে বসে আছ, আর কিছু কি মনে রাখতে দিলে ?—— সকলি ভুলেছে ভোলা মন ভোলে নি ভোলে নি শুধু ওই চন্দ্ৰানন। ১০ নম্বর মধুমিস্ত্রির গলিতে একতলার একটি ঘরে চিরকুমার-সভার অধিবেশন হয়। বাড়িটি সভাপতি চন্দ্ৰীমাধববাবুর বাসা । তিনি লোকটি ব্ৰাহ্ম কলেজের অধ্যাপক। দেশের কাজে অত্যন্ত উৎসাহী ; মাতৃভূমির উন্নতির জন্য ক্রমাগতই নানা মতলব তাহার মাথায় আসিতেছে। শরীরটি কৃশ কিন্তু কঠিন, মাথাটা মস্ত, বড়ো দুইটি চোখ অন্যমনস্ক খেয়ালে পরিপূর্ণ। প্রথমটা সভায় সভ্য অনেকগুলি ছিল। সম্প্রতি সভাপতি বাদে তিনটিতে আসিয়া ঠেকিয়াছে। যুথভ্ৰষ্টগণ বিবাহ করিয়া গৃহী হইয়া রোজগারে প্রবৃত্ত। এখন তাহারা কোনোপ্রকার চাদার খাতা দেখিলেই প্ৰথমে হাসিয়া উড়াইয়া দেন, তাহাতেও খাতাধারী টিকিয়া থাকিবার লক্ষণ প্ৰকাশ করিলে গালি দিতে আরম্ভ করেন। নিজেদের দৃষ্টান্ত স্মরণ করিয়া দেশহিতৈষীর প্রতি তাহাদের অত্যন্ত অবজ্ঞা জন্মিয়াছে। বিপিন শ্ৰীশ এবং পূর্ণ তিনটি সভ্য কলেজে পড়িতেছে, এখনো সংসারে প্রবেশ করে নাই। বিপিন ফুটবল খেলে, তাহার শরীরে অসামান্য বল, পড়াশুনা কখন করে কেহ বুঝিতে পারে না, অথচ চাটুপটু একজামিন পাস করে। শ্ৰীশ বড়োমানুষের ছেলে, স্বাস্থ্য তেমন ভালো নয়, তাই বাপ-মা পড়াশুনার দিকে তত বেশি উত্তেজনা করেন না- শ্ৰীশ নিজের খেয়াল লইয়া থাকে। বিপিন এবং