পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?(?br রবীন্দ্র-রচনাবলী নৃপবালা! আচ্ছা নীরু, এবারে যে প্রাইজটার কথা চলছে সেটার জন্য তুই কি খুব ব্যস্ত হয়েছিস ; নীরবালা। কোনটা বল দেখি। চিরকুমার-সভার দুটাে সভ্য ? নৃপবালা। যেই হােক-না কেন, তুই তাে বুঝতে পারছিস । নীরবালা। তা ভাই, সত্যি কথা বলব ? (নৃপর গলা জড়াইয়া কানে কানে) শুনেছি কুমারসভার দুটি সভের মধ্যে খুব ভাব, আমরা যদি দুজনে দুই বন্ধুর হাতে পড়ি তা হলে বিয়ে হয়েও আমাদের ছাড়াছাড়ি হবে না— নইলে আমরা কে কোথায় চলে যাব তার ঠিক নেই। তাই তাে সেই যুগল দেবতার জন্যে এত পুজোর আয়ােজন করেছি। ভাই! জোড়হন্তে মনে মনে বলছি, হে কুমারসভার অশ্বিনীকুমারযুগল, আমাদের দুটি বােনকে এক বোটার দুটি ফুলের মতো তােমরা একসঙ্গে গ্রহণ করে । বিবাহসম্ভাবনার উল্লেখমাত্রে দুটি ভগিনী পরস্পরকে জড়াইয়া ধরিল এবং নৃপ কোনোমতে চোখের জল সামলাইতে পারিল না। নৃপবালা। আচ্ছা নীরু, মেজদিদিকে কেমন করে ছেড়ে যাবি বল দেখি। আমরা দুজনে গেলে ওঁর আর কে থাকবে ? নীরবালা। সে কথা অনেক ভেবেছি। থাকতে যদি দেন তা হলে কি ছেড়ে যাই ? ভাই, ওঁর তো স্বামী নেই, আমাদেরও নাহয় স্বামী না রইল। মেজদিদির চেয়ে বেশি সুখে আমাদের দরকার কী ? পুরুষবেশধারিণী শৈলবালার প্রবেশ নীরু টেবিলের উপরিস্থিত থালা হইতে একটি ফুলের মালা তুলিয়া লইল । শৈলবালার গলায় পরাইয়া কহিল, “আমরা দুই স্বয়ম্বরা তোমাকে আমাদের পতিরূপে বরণ করলুম।” এই বলিয়া শৈলবালাকে প্ৰণাম করিল। শৈল । ও আবার কী ? নীরবালা । ভয় নেই ভাই, আমরা দুই সতীনে তোমাকে নিয়ে ঝগড়া করব না। যদি করি, সেজদিদি আমার সঙ্গে পারবে না— আমি একলাই মিটিয়ে নিতে পারব, তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না। না, সত্যি বলছি মেজদিদি, তোমার কাছে আমরা যেমন আদরে আছি। এমন আদর কি কোথাও পাব ? কেন তবে আমাদের পরের গলায় দিতে চাস ? পুনর্বাের নৃপর দুই চক্ষু বাহিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল। “ও কী ও নৃপ, ছি” বলিয়া শৈল তাহার চোখ মুছিয়া দিল ; কহিল, “ তোদের কিসে সুখ তা কি তোরা জানিস? আমাকে নিয়ে যদি তোদের জীবন সার্থক হত তা হলে কি আমি আর কারও হাতে তোদের দিতে পারতুম ?” তিনজনে মিলিয়া একটা অশ্রুবর্ষণকাণ্ড ঘটিবার উপক্রম’ করিতেছিল এমন সময়ে রসিকদাদা সভা এখানে বসবে, কিরকম ভাবে চলব। শিখিয়ে দে !” নীর কহিল, “ ফের পুরোনো ঠাট্টা ?— তোমার ঐ সভ্য-অসভ্যর কথাটা এই পরশু থেকে বলছি।” রসিক। যাকে জন্ম দেওয়া যায় তার প্রতি মমতা হয় না ? ঠাট্টা একবার মুখ থেকে বের হলেই কি রাজপুতের কন্যার মতো তাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হবে ? হয়েছে কী— যতদিন চিরকুমার-সভা টিকে থাকবে এই ঠাট্টা তোদের দু-বেলা শুনতে হবে। নীরবালা। তবে ওটাকে তো একটু সকাল সকাল সেরে ফেলতে হচ্ছে। মেজদিদি ভাই, আর দয়ামায়া নয়—রসিকদাদার রসিকতাকে পুরোনাে হতে দেব না, চিরকুমার-সভার চিরত্ব আমরা অচিরে ঘুচিয়ে দেব তবেই তো আমাদের বিশ্ববিজয়িনী নারী নাম সার্থক হবে। কিরকম করে আক্রমণ করতে হবে একটা কিছু প্ল্যান ঠাউরেছিস ? শৈল। কিছুই না। ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে যখন যেরকম মাথায় আসে।