পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাই আজি শুনিতেছি তিরুর মর্মরে এত ব্যাকুলতা ; অলস ঔদাস্যভরে মধ্যাহ্নের তপ্ত বায়ু মিছে খেলা করে শুষ্ক পত্ৰ লয়ে ; বেলা ধীরে যায় চলে ছায়া দীর্ঘতর করি অশাথের তলে । বিশ্বের প্রাস্তরমাঝে ; শুনিয়া উদাসী বসুন্ধরা বসিয়া আছেন এলোচুলে দূরব্যাপী শস্যক্ষেত্রে জাহ্নবীর কুলে একখানি রৌদ্রপীত হিরণ্য—অঞ্চল দূর নীলাম্বরে মগ্ন ; মুখে নাহি বাণী । দেখিলাম তার সেই স্নান মুখখানিসেই দ্বারপ্রান্তে লীন স্তব্ধ মৰ্মাহত মোর চারি বৎসরের কন্যাটির মতো । জোড়াসাবে১ ৪ কার্তিক ১২৯৯ সমুদ্রের প্রতি পুরীতে সমুদ্র দেখিয়া একমাত্ৰ কন্যা তব কোলে । তাই তন্দ্ৰা নাহি আর সদা আন্দোলন ; তাই উঠে বেদমন্ত্রসম ভাষা অস্তরের অনন্ত প্ৰাৰ্থনা, নিয়ত মঙ্গলগানে ধ্বনিত করিয়া দিশি দিশি ; তাই ঘুমন্ত পৃথীরে অসংখ্য চুম্বন কর আলিঙ্গনে সর্ব অঙ্গ ঘিরে তরঙ্গবন্ধনে বঁাধি, নীলাম্বর অঞ্চলে তোমার সযত্বে বেষ্টিয়া ধরি সস্তপণে দেহখানি তার সুকোমল সুকৌশলে। এ কী সুগভীর স্নেহ খেলা অসুনিধি, ছল করি দেখাইয়া মিথ্যা অবহেলা ধীরি। ধীরি পা টিপিয়া পিছু হটি চলি যাও দূরে, যেন ছেড়ে যেতে চাও ; আবার আনন্দপুর্ণ সুরে উল্লসি ফিরিয়া আসি কল্লোলে বঁ্যাপায়ে পড় বুকে— রাশি রাশি শুভ্ৰহাস্যে, অশ্রািজলে, স্নেহগর্বসুখে আন্দ্রে করি দিয়ে যাও ধরিত্রীর নিমলি ললাট আশীৰ্ব্বাদে । নিত্যবিগলিত তব অন্তর বিরাট, আদি অন্ত সোহরাশি- আদি অন্ত তাহার কোথা রে ।