পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সোনার তরী কোথা তার তল ! কোথা কুল ! বলো কে বুঝিতে পারে তাহার অগাধ শান্তি, তাহার অপার ব্যাকুলতা, তার সুগভীর মৌন, তার সমুচ্ছল কলকথা, তার হাস্য, তার অশ্রণী:রাশি !- কখনো—বা আপনারে রাখিতে পার না যেন, স্নেহপূর্ণ স্কীতস্তনভারে উন্মাদিনী ছুটে এসে ধরণীীরে বক্ষে ধর চাপি নির্দয় আবেগে ; ধরা প্ৰচণ্ড পীড়নে উঠে বঁকাপি, রুদ্ধশ্বাসে উর্ধবিশ্বাসে চীৎকারি উঠিতে চাহে কঁকাদি, উন্মত্ত মেহম্মুকুধায় রাক্ষসীর মতো তারে বাধি পীডিয়া নাডিয়া যেন টুটিয়া ফেলিয়া একেবারে প্ৰকাণ্ড প্ৰলয়ে । পরীক্ষণে মহা অপরাধী-প্ৰায় পড়ে থাকে তাঁটতলে স্তব্ধ হয়ে বিষন্ন ব্যথায় নিষন্ন নিশ্চল- ধীরে ধীরে প্রভাত উঠিয়া এসে শাস্তদৃষ্টি চাহে তোমাপানে

সন্ধ্যাসখী ভালোবেসে

স্নেহকরস্পর্শ দিয়ে সাস্তুনা করিয়ে চুপে চুপে চলে যায় তিমির মন্দিরে ; রাত্রি শোনে বন্ধুরূপে গুমরি ক্ৰন্দন তব রুদ্ধ অনুতাপে ফুলে ফুলে। আমি পৃথিবীর শিশু বসে আছি তব উপকূলে, শুনিতেছি। ধ্বনি তব | ভাবিতেছি, বুঝা যায় বোন আত্মায়ের কাছে । মনে হয়, অস্তরের মাঝখানে নাউীতে যে-রক্ত বহে, সেও যেন ওই ভাষা জানে, আর কিছু শেখে নাই। মনে হয়, যেন মনে পড়ে যখন বিলীনভাবে ছিনু ওই বিরাট জঠরে অজাত ভুবন ভ্ৰাণ-মাঝে, লক্ষ কোটি বর্ষ ধ’রে ওই তব অবিশ্রাম কলতান অস্তরে অস্তরে মুদ্রিত হইয়া গেছে ; সেই জন্মপর্বের স্মরণ, গৰ্ভস্থ পথিবী-’পরে সেই নিত্য জীবনস্পন্দন জাগে যেন সমস্ত শিরায়, শুনি যবে নেত্ৰ করি নত বসি জনশূন্য তীরে ওই পুরাতন কলধ্বনি । দিক হতে দিগন্তরে যুগ হতে যুগান্তর গনি তখন আছিলে তুমি একাকিনী অখণ্ড আকুল আত্মহারা, প্ৰথম গর্ভের মহা রহস্য বিপুল না বুঝিয়া । দিবারাত্ৰি গঢ় এক স্নেহব্যাকুলতা, গর্ভিণীর পূর্বরাগ, অলক্ষিতে অপূর্ব মমতা, অজ্ঞাত আকাঙক্ষারাশি, নি নিরস্তর উঠিত ব্যাকুলি । প্ৰ ঃসন্তান শূন্য বক্ষোদেশে তি প্ৰাতে উষা এসে 8 G