পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰজাপতির নির্বন্ধ \ص O)? তোমার বোনেরা সেই-সব পড়ে সেয়ানা হয়ে উঠেছে, সাজতে চায় না ! পুরবালা। সে-সব হল সত্যযুগের কথা। কলিকালের দুষ্যন্ত মহারাজরা সাজসজ্জাতেই ভোলেন। অক্ষয় । যথাপুরবালা। যথা তুমি। যেদিন তুমি দেখতে এলে মা বুঝি আমাকে সাজিয়ে দেন নি ? অক্ষয় । আমি মনে মনে ভাবলেম, সাজেও যখন একে সেজেছে তখন সৌন্দর্যে না জানি কত শোভা হবে ! পুরবালা। আচ্ছা, তুমি থামো, নীরু আয়! নীরবালা । না ভাই দিদিপুরবালা। আচ্ছা, সাজ নাই করলি চুল তো বাধতে হবে! অক্ষয় | গান অলকে কুসুম না দিয়ো, শুধু শিথিলাকবরী বাধিয়ো। হৃদয়দুয়ারে ঘা দিয়ো । আকুল আঁচলে পথিকচরণে মরণের ফাদ ফাদিয়ো । না করিয়া বাদ মনে যাহা সাধ নিদিয়া নীরবে সাধিয়ো । পুরবালা । তুমি আবার গান ধরলে ? আমি কখন কী করি বলো দেখি। তাদের আসবার সময় হল— এখনো আমার খাবার তৈরি করা বাকি আছে। অক্ষয়। পিতামহ ভীষ্ম, যুদ্ধের সমস্তই প্ৰস্তুত ? রসিক। সমস্তই— বীরপুরুষ দুটিও সমাগত। অক্ষয়। এখন কেবল দিব্যাস্ত্ৰ দুটি সাজতে গেছেন। তুমি তা হলে সেনাপতির ভার গ্রহণ করো, আমি একটু অন্তরালে থাকতে ইচ্ছা করি। রসিক । আমিও প্রথমটা একটু আড়াল হই । | 2F [নগ্রুপ ও নীরকে লইয়া প্ৰস্থান শ্ৰীশ ও বিপিনের প্রবেশ শ্ৰীশ। বিপিন, তুমি তো আজকাল সংগীতবিদ্যার উপর চীৎকারশব্দে ডাকাতি আরম্ভ করেছ।— কিছু আদায় করতে পারলে ? বিপিন। কিছু না। সংগীতবিদ্যার দ্বারে সপ্তসুর অনবরত পাহারা দিচ্ছে, সেখানে কি আমার ঢোকবার জো আছে। কিন্তু এ প্রশ্ন কেন তোমার মনে উদয় হল ? শ্ৰীশ। আজকাল মাঝে মাঝে কবিতায় সুর বসাতে ইচ্ছে করে। সেদিন বইয়ে পড়ছিলুম— কেন সারাদিন ধীরে ধীরে বালু নিয়ে শুধু খেল তীরে। চলে গেল বেলা, রেখে মিছে খেলা ঝাপ দিয়ে পড়ো কালো নীরে। অকুল ছানিয়ে যা পাস তা নিয়ে মনে হচ্ছিল এর সুরাটা যেন জানি, কিন্তু গাবার জো নেই!