পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रूङ्काङ्क्षेि Voobro (? জোগাইতেছি। আমরা লড়াই করিতে যাইব না, আমরা ভিক্ষা করিতেও ফিরিব না, কিন্তু আমরা কি এ কথা বলিতে পারিব না যে, না, আর নয়— আমাদের এই অপমানিত উপবাসক্লিষ্ট মাতৃভূমির অন্নের গ্রাস বিদেশের পাতে তুলিয়া দিয়া তাহার পরিবর্তে আমাদের বেশভূষার শখ মিটাইব না। আমরা ভালো হউক মন্দ হউক, দেশের কাপড় পরিব, দেশের জিনিস ব্যবহার করিব। ভগিনীগণ, সৌন্দর্যচর্চার দোহাই দিবেন না। সৌন্দর্যবোধ অতি উত্তম পদার্থ, কিন্তু তাহার চেয়েও উচ্চ জিনিস আছে। আমি এ কথা স্বীকার করিব না যে, দেশী জিনিসে আমাদের সৌন্দর্যবোধ ক্লিষ্ট হইবে । কিন্তু যদি শিক্ষা ও অভ্যাস -ত্রুমে আমাদের সেই রূপই ধারণা হয় তবে এই কথা বলিব, সৌন্দর্যবোধকেই সকলের চেয়ে বড়ো করিবার দিন আজ নহে-- সন্তান যখন দীর্ঘকাল রোগশয্যায় শায়িত তখন জননী বেনাবসি শাড়িখানা বেচিয়া তাহার চিকিৎসার ব্যবস্থা করিতে কুষ্ঠিত হন না, তখন কোথায় থাকে সৌন্দর্যবোধের দাবি ? জানি, আমাকে অনেকে বলিবেন, কথাটা বলিতে যত সহজ করিতে তত সহজ নহে। আমাদের অভ্যাস, আমাদের সংস্কার, আমাদের আরামস্পপুহা, আমাদের সৌন্দর্যবোধ-— ইহাদিগকে ঠেলিয়া নড়ানো বড়ো কম কথা নহে । নিশ্চয়ই তাহা নহে। ইহা সহজ নহে। ইহার চেয়ে একদিনের মতো চাদার খাতায় সহি দেওয়া সহজ। কিন্তু বড়ো কাজ সহজে হয় না। যখন সময় আসে তখন ধর্মের শঙ্খ বাজিয়া উঠে, তখন যাহা কঠিন তাহাকেই বরণ করিয়া লইতে হয় । বস্তুত তাহাতেই আনন্দ--- সহজ নহে বলিয়াই আনন্দ, দুঃসাধ্য বলিয়াই সুখ । আমরা ইতিহাসে পড়িয়াছি, যুদ্ধের সময় রাজপুত মহিলারা অঙ্গের ভূষণ, মাথার কেশ দান করিয়াছে ; তখন সুবিধা বা সৌন্দর্যচর্চার কথা ভাবে নাই। ইহা হইতে আমরা এই শিখিয়াছি যে, জগতে স্ত্রীলোক যদি বা যুদ্ধ না করিয়া থাকে, তাগ করিয়াছে; সময় উপস্থিত হইলে ভূষণ হইতে প্ৰাণ পর্যন্ত ত্যাগ করিতে কুষ্ঠিত হয় নাই। কর্মের বীর্য অপেক্ষা ত্যাগের বীর্য কোনো অংশেই নূ্যন নহে! ইহা যখন ভাবি তখন মনে এই গৌরব জন্মে যে, এই বিচিত্ৰশক্তিচালিত সংসারে স্ত্রীলোককে লজিত হইতে হয় নাই ; স্ত্রীলোক কেবল সৌন্দৰ্য্যদ্বারা মনোহরণ করে নাই, তাগের দ্বারা শক্তি দেখাইযাছে। আজ আমাদের বঙ্গদেশ রাজশক্তির নির্দয় আঘাতে বিক্ষত হইয়াছে, আজ বঙ্গরমণীদের ত্যাগের দিন। আজ আমরা ব্ৰতগ্রহণ করিব । আজ আমরা কোনো ক্লেশকে ডরিব না, উপহাসকে অগ্রাহ্য করিব, আজ আমরা পীড়িত জননীর রোগশয্যায় বিলাতের সাজ পরিয়া শৌখিনতা করিতে যাইব না ; দেশের জিনিসকে রক্ষা করা, এও তো ” রমণীর একটা বিশেষ কাজ । আমরা ভালোবাসিতে জানি। ভালোবাসা চাকচিক্যে ভুলিয়া নতনের কুহিকে চারি দিকে ধাবমান হয় না। আমাদের যাহা আপন, সে সুশ্ৰী হউক, আর কুশ্ৰী হউক, নারীর কাছে অনাদর পায় না—– সংসার তাই রক্ষা পাইতেছে। একবার ভাবিয়া দেখুন, আজ যে বঙ্গসাহিত্য বলিষ্ঠভাবে অসংকোচে মাথা তুলিতে পারিয়াছে, একদিন শিক্ষিত পুরুষসমাজে ইহার অবজ্ঞার সীমা ছিল না। তখন পুরুষেরা বাংলা বই কিনিয়া লজার সহিত কৈফিয়ত দিতেন যে, আমরা পড়িব না, বাড়ির ভিতরে মেয়েরা পড়িবে | আচ্ছা আচ্ছা, তাহাদের সে লজার ভার আমরাই বহন করিয়াছি, কিন্তু ত্যাগ করি নাই। আজ তো সে লজার দিন ঘুচিয়াছে। যে বাড়ির ভিতরে মেয়েদের কোলে বাংলাদেশের শিশুসন্তানেরা— তাহারা কালোই হউক আর ধলেই হউক— পরম আদরে মানুষ হইয়া উঠিতেছে, বঙ্গসাহিত্যও সেই বাড়ির ভিতরে মেয়েদের কোলেই তাহার উপেক্ষিত শিশু-অবস্থা যাপন করিয়াছে, অন্নবস্ত্রের দুঃখ পায় নাই। একবার ভাবিয়া দেখুন, যেখানে বাঙালি পুরুষ বিলাতি কাপড় পরিয়া সর্বত্র নিঃসংকোচে আপনাকে প্রচার করিতেছেন সেখানে তাহার স্ত্রীকন্যাগণ বিদেশী বেশ ধারণ করিতে পারেন নাই।