পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉obア রবীন্দ্র-রচনাবলী কবি বলেন, যে আমার অপকার করে সে অামার কাছে ঋণী, পরকালে সে ঋণ তাকে শোধ করতেই হবে, যে আমার উপকার করে আমি তার কাছে ঋণী, কোনো কালেই সে ঋণ শোধ করতে পারব না । বসন্তরায়। বা বা বা ! লোকটা তো বেশ ! খাসাহেব, তোমাকে বড়ে ঘরের লোক বলে মনে হচ্ছে । পাঠান। ( সেলাম করিয়া ) ক্য৷ তাজ্জব ! মহারাজ ঠিক ঠাউরেছেন। বসন্তরায় । এখন তোমার কী করা হয় ? পাঠান। (সনিশ্বাসে ) হুজুর, গরিব হয়ে পড়েছি, চাষবাস করেই দিন চলে। কবি বলেন, হে অদৃষ্ট, তৃণকে তৃণ করে গড়েছ সেজন্যে তোমাকে দোষ দিই নে। কিন্তু বটগাছকে বটগাছ করেও তাকে ঝড়ের ঘায়ে তৃণের সঙ্গে এক মাটিতে শোয়াও, এতেই বুঝেছি তোমার হৃদয়ট পাষাণ ! বসন্তরায়। বাহব, বাহব ! কবি কী কথাই বলেছেন । সাহেব, যে দুটো বয়েত আজ বললে ও তো আমাকে লিখে দিতে হবে । আচ্ছা থাসাহেব, তোমার তো বেশ মজবুত শরীর, তুমি তো ফৌজের সিপাহি হতে পার। পাঠান। হজুরের মেহেরবানি হলেই পারি। আমার বাপ-পিতামহ সকলেই তলোয়ার হাতে মরেছেন । কবি বলেন— বসন্তরায় । ( হাসিয়া ) কবি যাই বলুন, আমার কাজ যদি নাও তবে তলোয়ার হাতে নিয়ে মরার শখ মিটতে পারে, কিন্তু সে তলোয়ার খাপ থেকে খোলবার সুযোগ হবে না। প্রজার শাস্তিতে আছে– ভগবান করুন আর লড়াইয়ের দরকার না হয়। বুড়ো হয়েছি, তলোয়ার ছেড়েছি, এখন তার বদলে আর-একজন আমার পাণিগ্রহণ করেছে । ( সেতারে ঝংকার ) পাঠান। ( ঘাড় নাড়িয়া ) হায় হায়, এমন অস্ত্র কি আছে ! একটি বয়েত আছে — তলোয়ারে শক্রকে জয় করা যায় কিন্তু সংগীতে শক্রকে মিত্র করা যায়। বসন্তরায় । ( উৎসাহে উঠিয়া দাড়াইয়া ) কী বললে, খাসাহেব ! সংগীতে শক্রকে মিত্র করা যায় ! কী চমৎকার! তলোয়ার যে এমন ভয়ানক জিনিস, তাতেও শত্রুর শত্ৰুত্ব নাশ করা যায় না। কেমন করে বলব নাশ করা যায় ? রোগীকে বধ করে রোগ আরোগ্য করা সে কেমনতরে আরোগ্য ? কিন্তু সংগীত যে এমন মুছ জিনিস, তাতে শত্রু নাশ না করেও শত্ৰুত্ব নাশ করা যায়। এ কি সাধারণ কবিত্বের কথা ! বাঃ, কী তারিফ ! খাসাহেব, তোমাকে একবার রায়গড়ে যেতে হচ্ছে। আমি যশোর থেকে ফিরে গিয়েই আমার সাধ্যমত তোমার কিছু—