পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী যে ব্যক্তি খাড়া আছে, আর যে ব্যক্তি কণত হয়ে পড়েছে, দুই পক্ষেরই ভিতরটা তখনও গরগর করছে। চাটুজ্যের ঘোষালদের উপর শেষ কোপটা দিলে সমাজের খাড়ায়। রটিয়ে দিলে এককালে ওরা ছিল ভঙ্গজ ব্রাহ্মণ, এখানে এসে সেটা চাপ দিয়েছে, কেঁচো সেজেছে কেউটে । যারা খোটা দিলে, টাকার জোরে তাদের গলার জোর। তাই স্মৃতিরত্নপাড়াতেও তাদের এই অপকীর্তনের অকুস্বার-বিসর্গওআল। ঢাকি জুটল। কলঙ্কভঞ্জনের উপযুক্ত প্রমাণ বা দক্ষিণ ঘোষালদের শক্তিতে তখন ছিল না, অগত্য চণ্ডীমণ্ডপবিহারী সমাজের উৎপাতে এর দ্বিতীয়বার ছাড়ল ভিটে । রজবপুরে অতি সামান্যভাবে বাসা বাধলে । যারা মারে তারা ভোলে, যারা মার খায় তারা সহজে ভুলতে পারে না । লাঠি তাদের হাত থেকে খসে পড়ে বলেই লাঠি তারা মনে-মনে খেলতে থাকে। বহু দীর্ঘকাল হাতটা অসাড় থাকাতেই মানসিক লাঠিটা ওদের বংশ বেয়ে চলে আসছে। মাঝে মাঝে চাটুজ্যেদের কেমন করে ওরা জব্দ করেছিল সত্যমিথ্যে মিশিয়ে সে-সব গল্প ওদের ঘরে এখনও অনেক জমা হয়ে অাছে। খোড়ে চালের ঘরে আষাঢ় - সন্ধ্যাবেলায় ছেলেরা সেগুলো হা করে শোনে। চাটুজ্যেদের বিখ্যাত দাশু সর্দার রাত্রে যখন ঘুমোচ্ছিল তখন বিশ-পচিশ জন লাঠিয়াল তাকে ধরে এনে ঘোষালদের কাছারিতে কেমন করে বেমালুম বিলুপ্ত করে দিলে সে গল্প আজ একশো বছর ধরে ঘোষালদের ঘরে চলে আসছে। পুলিস যখন খানাতল্লাসি করতে এল নায়েব ভুবন বিশ্বাস অনায়াসে বললে, হা, সে কাছারিতে এসেছিল তার নিজের কাজে, হাতে পেয়ে বেটাকে কিছু অপমানও করেছি, শুনলেম নাকি সেই ক্ষোভে বিবাগি হয়ে চলে গেছে। হাকিমের সন্দেহ গেল না । ভুবন বললে, হুজুর, এই বছরের মধ্যে যদি তার ঠিকানা বের করে দিতে না পারি তবে আমার নাম ভুবন বিশ্বাস নয়। কোথা থেকে দাশুর মাপের এক গুণ্ড খুজে বার করলে— একেবারে তাকে পাঠালে ঢাকায়। সে করলে ঘটি চুরি, পুলিসে নাম দিলে দাশরথি মণ্ডল। হল এক মাসের জেল। যে তারিখে ছাড়া পেয়েছে ভুবন সেইদিন ম্যাজেস্টেরিতে খবর দিলে দাণ্ড সর্দার ঢাকার জেলখানায়। তদন্তে বেরোল, দাণ্ড জেলখানায় ছিল বটে, তার গায়ের দোলাইখানা জেলের বাইরের মাঠে ফেলে চলে গেছে। প্রমাণ হল সে দোলাই সর্দারেরই। তার পর সে কোথায় গেল সে খবর দেওয়ার দায় ভুবনের নয়। এই গল্পগুলো দেউলে-হওয়া বর্তমানের সাবেক কালের চেক । গৌরবের দিন গেছে ; তাই গৌরবের পুরাতত্ত্বটা সম্পূর্ণ ফাক বলে এত বেশি আওয়াজ করে। যা হোক, যেমন তেল ফুরোয়, যেমন দীপ নেবে, তেমনি এক সময়ে রাতও