পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী چه د মহলে গার্হস্থ্য, আর-এক মহলে ইয়ারকি। অর্থাৎ এক মহলে দশকর্ম, আর-এক মহলে একাদশ অকর্ম। ঘরে আছেন ইষ্টদেবতা আর ঘরের গৃহিণী। সেখানে পূজা-অৰ্চনা, অতিথিসেব পালপার্বণ, ব্ৰত-উপবাস, কাঙালিবিদায়, ব্রাহ্মণভোজন, পাড়াপড়শি, গুরুপুরোহিত। ইয়ারমহল গৃহসীমার বাইরেই, সেখানে নবাবি আমল, মজলিসি সমারোহে সরগরম। এইখানে আনাগোনা চলত গৃহের প্রত্যন্তপুরবাসিনীদের। তাদের সংসৰ্গকে তখনকার ধনীরা সহবত শিক্ষার উপায় বলে গণ্য করত। দুই বিরুদ্ধ হাওয়ার দুইকক্ষবর্তী গ্ৰহ-উপগ্রহ নিয়ে গৃহিণীদের বিস্তর সহ করতে হয়। মুকুন্দলালের স্ত্রী নন্দরানী অভিমানিনী, সহ করাটা তার সম্পূর্ণ অভ্যাস হল না। তার কারণ ছিল। তিনি নিশ্চিত জানেন, বাইরের দিকে তার স্বামীর তানের দৌড় যতদূরই থাক, তিনিই হচ্ছেন ধুয়ে, ভিতরের শক্ত টান তারই দিকে। সেইজন্যেই স্বামী যখন নিজের ভালোবাসার পরে নিজে অন্যায় করেন, তিনি সেটা সইতে পারেন না। এবারে তাই ঘটল । (t রাসের সময় খুব ধুম। কতক কলকাতা, কতক ঢাকা থেকে আমোদের সরঞ্জাম এল। বাড়ির উঠোনে কৃষ্ণযাত্রা, কোনোদিন বা কীর্তন । এইখানে মেয়েদের ও সাধারণ পাড়াপড়শির ভিড় । অন্যবারে তামসিক আয়োজনটা হত বৈঠকখানা ঘরে ; অন্তঃপুরিকার, রাতে ঘুম নেই, বুকে ব্যথা বিধছে, দরজার ফাক দিয়ে কিছু-কিছু আভাস নিয়ে যেতে পারতেন। এবারে খেয়াল গেল বাইনাচের ব্যবস্থা হবে বজরায় নদীর উপর। কী হচ্ছে দেখবার জো নেই বলে নন্দরানীর মন রুদ্ধবাণীর অন্ধকারে আছড়ে আছড়ে কাদতে লাগল। ঘরে কাজকর্ম, লোককে খাওয়ানো-দাওয়ানো, দেখাশুনে। হাসিমুখেই করতে হয়। বুকের মধ্যে কাটাটা নড়তে চড়তে কেবলই বেঁধে, প্রাণট। হঁাপিয়ে হঁাপিয়ে ওঠে, কেউ জানতে পারে না। ও দিকে থেকে-থেকে তৃপ্ত কণ্ঠের রব ওঠে, জয় হোক রানীমার । o অবশেষে উৎসবের মেয়াদ ফুরোল, বাড়ি হয়ে গেল খালি। কেবল ছেড়া কলাপাত৷ ও সরা-খুরি-ভাঁড়ের ভগ্নাবশেষের উপর কাক-কুকুরের কলরবমুখর উত্তরকাও চলছে। ফরাশের সিড়ি খাটিয়ে লণ্ঠন খুলে নিল, চাদোয় নামাল, ঝাড়ের টুকরো বাতি ও শোলার ফুলের ঝালরগুলো নিয়ে পাড়ার ছেলেরা কাড়াকড়ি বাধিয়ে দিল। সেই