পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९ ०२ রবীন্দ্র-রচনাবলী “ভেবেই ভাবনা শেষ করতে হয় রে, তাকে ফাকি দিয়ে থামাতে গেলে বিপরীত ঘটে। একটু ধৈর্য ধর, একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।” বিপ্রদাস সে মেলে চিঠিতে লিখলে, টাকা পাঠাতে হলে কুমুর পণের সম্বলে হাত দিতে হয় ; সে অসম্ভব । § যথাসময়ে উত্তর এল। স্থবোধ লিখেছে, কুমুর পণের টাক। সে চায় না। সম্পত্তিতে তার নিজের অর্ধ অংশ বিক্রি করে যেন টাকা পাঠানো হয়। সঙ্গে সঙ্গেই পাওআর অফ অ্যাটর্মি পাঠিয়েছে। এ চিঠি বিপ্রদাসের বুকে বাণের মতো বিধল। এতবড়ো নিষ্ঠুর চিঠি স্থবোধ লিখল কী করে! তখনই বুড়ে দেওয়ানজিকে ডেকে পাঠালে। জিজ্ঞাসা করলে, “ভূষণ রায়রা করিমহাটি তালুক পত্তনি নিতে চেয়েছিল না ? কত পণ দেবে ?” দেওয়ান বললে, “বিশ হাজার পর্যন্ত উঠতে পারে।” “ভূষণ রায়কে তলব দিয়ে পাঠাও। কথাবার্তা কইতে চাই।” বিপ্রদাস বংশের বড়ে ছেলে। তার জন্মকালে তার পিতামহ এই তালুক স্বতন্ত্র ভাবে তাকেই দান করেছেন। ভূষণ রায় মস্ত মহাজন, বিশ-পচিশ লাখ টাকার তেজারতি। জন্মস্থান করিমহাটিতে। এইজন্যে অনেক দিন থেকে নিজের গ্রাম পত্তনি নেবার চেষ্টা। অর্থসংকটে মাঝে মাঝে বিপ্রদাস রাজি হয় আর-কি, কিন্তু প্রজার কেঁদে পড়ে। বলে, ওকে আমরা কিছুতেই জমিদার বলে মানতে পারব না। তাই প্রস্তাবটা বারে বারে যায় ফেসে। এবার বিপ্রদাস মন কঠিন করে বসল। ও নিশ্চয় জানে, সুবোধের টাকার দাবি এইখানেই শেষ হবে না। মনে মনে বললে, আমার তালুকের এই সেলামির টাকা রইল স্থবোধের জন্যে, তার পর দেখা যাবে। দেওয়ান বিপ্রদাসের মুখের উপর জবাব দিতে সাহস করলে না। গোপনে কুমুকে গিয়ে বললে, “দিদি, তোমার কথা বড়োবাৰু শোনেন। বারণ করে তাকে, এটা অন্যায় হচ্ছে।” । বিপ্রদাসকে বাড়ির সকলেই ভালোবাসে। কারও জন্যে বড়োবাবু যে নিজের স্বত্ব নষ্ট করবে, এ ওদের গায়ে সয় না । বেলা হয়ে যায়। বিপ্রদাস ওই তালুকের কাগজপত্র নিয়ে ঘাটছে। এখনও স্নানাহার হয় নি। কুমু বারে বারে তাকে ডেকে পাঠাচ্ছে। শুকনো মুখ করে এক সময়ে অন্দরে এল। যেন বাজে-ছোওয়া পাতা-ঝলসানো গাছের মতো। কুমুর বুকে . শেল বিধল । স্নানাহার হয়ে গেলে পর বিপ্রদাস আলবোলার নল-হাতে থাটের বিছানায় প৷