পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ 萤 २० > প্রতি ওর অন্তর আজ দাক্ষিণ্যে ভরা। বিকেলে গা ধোবার সময় খিড়কির পুকুরে গলা ডুবিয়ে চুপ করে বসে থাকে, জল যেন ওর সর্বাঙ্গে আলাপ করে। বিকেলের বাকী আলো পুকুরের পশ্চিম-ধারের বাতাবি-লেবু গাছের শাখার উপর দিয়ে এসে ঘন কালো জলের উপরে নিকষে সোনার রেখার মতো ঝিকিমিকি করতে থাকে ; ও চেয়ে চেয়ে দেখে, সেই আলোয় ছায়ায় ওর সমস্ত শরীরের উপর দিয়ে অনির্বচনীয় পুলকের কাপন বয়ে যায়। মধ্যাহ্নে বাড়ির ছাদের চিলেকোঠায় একলা গিয়ে বসে থাকে, পাশের জামগাছ থেকে ঘুঘুর ডাক কানে আসে। ওর যৌবন-মন্দিরে আজ যে দেবতার বরণ হচ্ছে ভাবঘন রসের রূপটি তার, কৃষ্ণরাধিকার যুগলৰূপের মাধুর্য তার সঙ্গে মিশেছে। বাড়ির ছাদের উপরে এসরাজটি নিয়ে ধীরে ধীরে বাজায়, ওর দাদার সেই ভূপালী স্বরের গানটি : আজু মোর ঘরে আইল পিয়রওয়া রোমে রোমে হরথীল। রাত্রে বিছানায় বসে প্রণাম করে, সকালে উঠে বিছানায় বসে আবার প্রণাম করে। কাকে করে সেটা স্পষ্ট নয়— একটি নিরবলম্ব ভক্তির স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস। কিন্তু মনগড়া প্রতিমার মন্দিরদ্বার চিরদিন তো রুদ্ধ থাকতে পারে না । কানাকানির নিশ্বাসের তাপে ও বেগে সে মূর্তির স্থষমা যখন ঘা খেতে আরম্ভ করে তখন দেবতার রূপ টিকবে কী করে ? তখন ভক্তের বড়ে দুঃখের দিন । একদিন তেলেনিপাড়ার বুড়ি তিনকড়ি এসে কুমুদিনীর মুখের সামনেই বলে বসল, “হঁ্যাগ, আমাদের কুমুর কপালে কেমন রাজা জুটল ? ওই-যে বেদেনীদের গান আছে— এক-যে ছিল কুকুর-চাট শেয়ালকাটার বন, কেটে করলে সিংহাসন । এও সেই শেয়ালকাটা-বনের রাজা। ওই তো রজবপুরের আন্দো মুহুরির ছেলে মেধে । দেশে যে বার আকাল, মগের মুলুক থেকে চাল আনিয়ে বেচে ওর টাকা । তবু বুড়ি মাকে শেষদিন পর্যন্ত রাধিয়ে রাধিয়ে হাড় কালি করিয়েছে।” মেয়ের উৎসুক হয়ে তিনকড়িকে ধরে বসে ; বলে, “বরকে জানতে নাকি ?” “জানতুম না ? ওর মা যে আমাদের পাড়ার মেয়ে, পুরুত চক্রবর্তীদের ঘরের। (গলা নিচু করে ) সত্যি কথা বলি বাছ, ভালো বামনের ঘরে ওদের বিয়ে চলে না। তা হোক গে, লক্ষ্মী তো জাতবিচার করেন না।” পূর্বেই বলেছিকুৈমুদিনীর মন একালের ছাচে নয়। জাতকুলের পবিত্রতা তার কাছে খুব একটা বাস্তব জিনিস। মনটা তাই যতই সংকুচিত হয়ে ওঠে ততই