পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

く) © রবীন্দ্র-রচনাবলী যারা নিন্দে করে তাদের উপর রাগ করে ; ঘর থেকে হঠাৎ কেঁদে উঠে ছুটে বাইরে চলে যায়। সবাই গা-টেপাটেপি করে বলে, “ইস, এখনই এত দরদ ! এ যে দেখি দক্ষযজ্ঞের সতীকেও ছাড়িয়ে গেল।” বিপ্রদাসের মনের গতি হাল-আমলের, তবু জাতকুলের হীনতায় তাকে কাবু করে। তাই, গুজবট চাপা দেবার অনেক চেষ্টা করলে। কিন্তু ছেড়া বালিশে চাপ দিলে তার তুলে যেমন আরও বেশি বেরিয়ে পড়ে, তেমনি হল। এ দিকে বুড়ে প্রজা দামোদর বিশ্বাসের কাছে খবর পাওয়া গেল যে, বহুপূর্বে ঘোষালের মুরনগরের পাশের গ্রাম শেয়াকুলির মালেক ছিল। এখন সেটা চাটুজ্যেদের দখলে। ঠাকুর-বিসর্জনের মামলায় কী করে সবসুদ্ধ ঘোষালদেরও বিসর্জন ঘটেছিল, কী কৌশলে কর্তাবাবুরা, শুধু দেশছাড়া নয়, তাদের সমাজছাড়া করেছিলেন, তার বিবরণ বলতে বলতে দামোদরের মুখ ভক্তিতে উজ্জল হয়ে ওঠে । ঘোষালের এককালে ধনে মানে কুলে চাটুজ্যেদের সমকক্ষ ছিলেন এটা স্থখবর, কিন্তু বিপ্রদাসের মনে ভয় লাগল যে, এই বিয়েটাও সেই পুরাতন মামলার একটা জের নাকি ? S\o অভ্রান মাসে বিয়ে। পচিশে আশ্বিন লক্ষ্মীপুজো হয়ে গেল। হঠাৎ সাতাশে আশ্বিনে তাবু ও নানাপ্রকার সাজসরঞ্জাম নিয়ে ঘোষাল-কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওভারসিয়র এসে উপস্থিত, সঙ্গে একদল পশ্চিমি মজুর। ব্যাপারখানা কী ? শেয়াকুলিতে ঘোষালদিঘির ধারে তাবু গেড়ে বর ও বরযাত্রীরা কিছুদিন আগে থাকতেই সেখানে এসে উঠবেন । এ কী রকম কথা ? বিপ্রদাস বললে, “র্তারা যতজন খুশি আস্থন, যতদিন খুশি থাকুন, আমরাই বন্দোবস্ত করে দেব। তাবুর দরকার কী ? অামাদের স্বতন্ত্র বাড়ি আছে, সেটা খালি করে দিচ্ছি।” ওভারসিয়র বললে, “রাজাবাহাদুরের হুকুম । দিঘির চারি ধারের বনজঙ্গলও সাফ করে দিতে বলেছেন— আপনি জমিদার, অনুমতি চাই।” o বিপ্রদাস মুখ লাল করে বললে, “এটা কি উচিত হচ্ছে ? জঙ্গল তো আমরাই সাফ করে দিতে পারি।” ওভারসিয়র বিনীতভাবে উত্তর করলে, “ওইখানেই রাজাবাহাদুরের পূর্বপুরুষের ভিটেবাড়ি, তাই শখ হয়েছে নিজেই ওটা পরিষ্কার করে নেবেন।”