পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २२७ ডাক্তগর আবার এসে ধীরে ধীরে বললে, “আর নয় দিদি।” বলে নিজের অশ্রুসিক্ত চোখ মুছে ফেললে। ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজার বাইরে যে চৌকিটা ছিল তার উপর বসে পড়ে মুখে আঁচল দিয়ে কুমু নি:শব্দে কাদতে লাগল। হঠাৎ এক সময়ে মনে পড়ে’গেল দাদার ‘বেসি’ ঘোড়াকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে যাবে বলে কাল রাত্রে সে গুড়মাখ। আটার রুটি তৈরি করে রেখেছিল। সইস আজ ভোরবেলায় তাকে খিড়কির বাগানে রেখে এসেছে। কুমু সেখানে গিয়ে দেখলে ঘোড়া আমড়াগাছতলায় ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে। দূর থেকে কুমুর পায়ের শব্দ শুনেই কান খাড়া করলে এবং তাকে দেখেই চিহি হিহি করে ডেকে উঠল। বঁ হাত তার কাধের উপর রেখে ডান হাতে কুমু তার মুখের কাছে রুটি ধরে তাকে খাওয়াতে লাগল। সে খেতে খেতে তার বড়ো বড়ো কালে স্নিগ্ধ চোখে কুমুর মুখের দিকে কটাক্ষে চাইতে লাগল। খাওয়া হয়ে গেলে বেসির দুই চোখের মাঝখানকার প্রশস্ত কপালের উপর চুমে খেয়ে কুমু দৌড়ে চলে গেল । Sb বিপ্রদাস নিশ্চয় মনে করেছিল মধুসূদন এই কয়দিনের মধ্যে একবার এসে দেখা করে যাবে। তা যখন করলে না তখন ওর বুঝতে বাকি রইল না যে, দুই পরিবারের এই বিবাহের সম্বন্ধটাই এল পরস্পরের বিচ্ছেদের খড়গ হয়ে। রোগের নিরতিশয় ক্লান্তিতে এ কথাটাকেও সহজভাবে সে মেনে নিলে। ডাক্তারকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে, “একটু এসরাজ বাজাতে পারি কি ?” ডাক্তার বললে, “না, আজ থাকৃ।” “তা হলে কুমুকে ডাকে, সে একটু বাজাক। আবার কবে তার বাজনা শুনতে পাব, কে জানে।” ডাক্তার বললে, “আজ সকালে ন-টার গাড়িতে ওঁদের ছাড়তে হৰে, নইলে সুর্যাস্তের আগে কলকাতায় পৌছোতে পারবেন না। কুমুর তো আর সময় নেই।” বিপ্রদাস নিশ্বাস ফেলে বললে, “না, এখানে ওর সময় ফুরোল। উনিশ বছর কাটতে পেরেছে, এখন এক ঘণ্টাও আর কাটবে না।” 寧 বিদায়ের সময় স্বামীগ্রী জোড়ে প্রণাম করতে এল। মধুসূদন ভদ্রত করে বললে, “তাই তো, আপনার শরীর তো ভালো দেখছি নে ৷” বিপ্রদাস তার কোনো উত্তর না করে বললে, “ভগবান তোমাদের কল্যাণ করুন।”