পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२8 রবীন্দ্র-রচনাবলী "দাদা, নিজের শরীরের একটু যত্ন কোরো” বলে আর-একবার বিপ্রদাসের পায়ের কাছে পড়ে কুমু কাদতে লাগল। হলুধ্বনি শঙ্খধ্বনি ঢাক-কাসর-নহবতে একটা আওয়াজের সাইক্লোন ঝড় উঠল। ওরা গেল চলে । Ú পরস্পরের আঁচলে চাদরে বাধা ওরা যখন চলে যাচ্ছে সেই দৃশুটা আজ, কেন কী জানি, বিপ্রদাসের কাছে বীভৎস লাগল। প্রাচীন ইতিহাসে তৈমুর জঙ্গিস অসংখ্য মামুষের কঙ্কালস্তম্ভ রচনা করেছিল। কিন্তু ওই-যে চাদরে-অঁাচলের গ্রন্থি, ওর স্বই জীবন-মৃত্যুর জয়তোরণ যদি মাপা যায় তবে তার চুড়া কোন নরকে গিয়ে ঠেকবে । কিন্তু এ কেমনতরো ভাবনা আজ ওর মনে । * পূজাৰ্চনায় বিপ্রদাসের কোনোদিন উৎসাহ ছিল না। তবু আজ হাত জোড় করে মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল। এক সময়ে চমকে উঠে বললে, “ডাক্তার, ডাকে। তো দেওয়ানজিকে।” বিপ্রদাসের হঠাৎ মনে পড়ে গেল, বিয়ে দিতে আসবার কিছুদিন আগে যখন সুবোধকে টাকা পাঠানো নিয়ে মন অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, হিসাবের খাতাপত্র ঘেঁটে ক্লান্ত, বেলা এগারোটা— এমন সময়ে অত্যন্ত বে-মেরামত গোছের একটা মানুষ, কিছুকালের না-কামানে কণ্টকিত জীর্ণ মুখ, হাড়-বের-কর শির-বের-করা হাত, ময়লা একখান চাদর, খাটো একখানা ধুতি, ছেড়া একজোড়া চটি-পরা এসে উপস্থিত। নমস্কার করে বললে, “বড়োবাৰু, মনে পড়ে কি ?” বিপ্রদাস একটু লক্ষ্য করে বললে, “কী, বৈকুণ্ঠ নাকি ?” বিপ্রদাস বালককালে যে ইস্কুলে পড়ত সেই ইস্কুলেরই সংলগ্ন একটা ঘরে বৈকুণ্ঠ ইস্কুলের বই খাত কলম ছুরি ব্যাটবল লাঠিম আর তারই সঙ্গে মোড়কে-করা চীনাবাদাম বিক্রি করত। তার ঘরে বড়ে ছেলেদের আডড ছিল— যতরকম অদ্ভুত অসম্ভব খোশগল্প করতে এর জুড়ি কেউ ছিল না। বিপ্রদাস জিজ্ঞাসা করলে, “তোমার এমন দশা কেন ?” কয়েক বৎসর হল সম্পন্ন অবস্থার গৃহস্থের ঘরে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। তাদের পণের বিশেষ কোনো আবশ্বক ছিল না বলেই বরের পণও ছিল বেশি। বারে শে৷ টাকায় রফা হয়, তা ছাড়া আশি ভরি সেনার গয়না। একমাত্র আদরের মেয়ে বলেই মরিয়া হয়ে সে রাজি হয়েছিল। একসঙ্গে সব টাকা সংগ্রহ করতে পারে নি, তাই মেয়েকে যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে ওরা বাপের রক্ত শুষেছে। সম্বল সবই ফুরোল তৰু এখনও আড়াই শো টাকা বাকি। এবারে মেয়েটির অপমানের শেষ নেই। অত্যন্ত