পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २२ ({ অসহ হওয়াতেই বাপের বাড়ি পালিয়ে এসেছিল। তাতে করে জেলের কয়েদির জেলের নিয়ম ভঙ্গ করা হল, অপরাধ বেড়েই গেল। এখন ওই আড়াই শো টাকা ফেলে দিয়ে মেয়েটাকে বাচাতে পারলে বাপ মরবার কথাটা ভাববার সময় পায়। বিপ্রদাস স্নান হাসি হাসলে। যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করবার কথা সেদিন ভাববারও জে ছিল না। ক্ষণকালের জন্যে ইতস্তত করলে, তার পরে উঠে গিয়ে বাক্স থেকে থলি ঝেড়ে দশটি টাকার নোট এনে তার হাতে দিল । বললে, “আরও দু-চার জায়গা থেকে চেষ্টা দেখো, আমার আর সাধ্য নেই।” বৈকুণ্ঠ সে কথা একটুও বিশ্বাস করলে না। পা টেনে টেনে চলে গেল, চটিজুতোয় অত্যন্ত অপ্রসন্ন শবদ । সেদিনকার এই ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল, আজ হঠাং বিপ্রদাসের মনে, পড়ল। দেওয়ানজিকে ডেকে হুকুম হল— বৈকুণ্ঠকে আজই আড়াই শো টাকা পাঠানে৷ চাই। দেওয়ানজি চুপ করে দাড়িয়ে মাথা চুলকোয়। জেদাজেদির মুখে খরচ করে বিবাহ তো চুকেছে, কিন্তু অনেকদিন ধরে তার হিসাব শোধ করতে হবে— এখন দিনের গতিকে আড়াই শো টাকা যে মস্তবড়ো অঙ্ক । দেওয়ানজির মুখের ভাব দেখে বিপ্রদাস আঙুল থেকে হীরের আংটি খুলে বললে, “ছোটোবাবুর নামে যে টাকা ব্যাঙ্কে জমা রেখেছি, তার থেকে ওই আড়াই শে। টাকা নাও, তার বদলে আমার আংটি বন্ধক রইল। বৈকুণ্ঠকে টাকাটা যেন কুমুর নামে পাঠানো হয় ।” > ふ বিবাহের লঙ্কাকাণ্ডের সব-শেষ অধ্যায়টা এখনও বাকি । সকালবেলায় কুশণ্ডিকা সেরে তবে বরকনে যাত্রা করবে এই ছিল কথা । নবগোপাল তারই সমস্ত উদযোগ ঠিক করে রেখেছে। এমন সময় বিপ্রদাসের ঘর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এসে রাজাবাহাদুর বলে বসল— কুশণ্ডিকা হবে বরের ওখানে, মধুপুরীতে। প্রস্তাবের ঔদ্ধতাটা নবগোপালের কাছে অসহ্য লাগল। আর কেউ হলে আজি একটা ফৌজদারি বাধত। তবু ভাষার প্রাবল্যে নবগোপালের আপত্তি প্রায় লাঠিয়ালির কাছ পর্যন্ত এসে তবে থেমেছিল । অন্তঃপুরে অপমানটা খুব বাজল। বহুদূর থেকে আত্মীয়-কুটুম সব এসেছে,