পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sలిe রবীন্দ্র-রচনাবলী টেনে নিয়ে কুমুর ও নিজের পায়ের উপর বিছিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে এক-আবরণের সহযোগিতা স্থাপন করলে। শরীর মন পুলকিত হয়ে উঠল। চমকে উঠে কুমুদিনী কম্বলটাকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছিল, শেষে নিজেকে সম্বরণ করে আসনের প্রান্তে গিয়ে সংলগ্ন হয়ে রইল । t কিছুক্ষণ এইভাবে যায় এমন সময় হঠাৎ কুমুর হাতের দিকে মধুসূদনের চোখ পড়ল । “দেখি দেখি” বলে হঠাৎ তার বা হাতটা চোখের কাছে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করলে, “তোমার আঙুলে এ কিসের আংটি ? এ যে নীল দেখছি।” কুমু চুপ করে রইল। “দেখো, নীল আমার সয় না, ওটা তোমাকে ছাড়তে হবে।” কোনো-এক সময়ে মধুসূদন নীলা কিনেছিল, সেই বছর ওর গাধাবোট-বোঝাই পাট হাওড়ার ব্রিজে ঠেকে তলিয়ে যায়। সেই অবধি নীলা-পাথরকে ও ক্ষমা করে না। কুমুদিনী আস্তে আস্তে হাতটাকে মুক্ত করতে চেষ্টা করলে। মধুসূদন ছাড়লে না ; বললে, “এটা আমি খুলে নিই।” কুমু চমকে উঠল ; বললে, “ন, থাক।” একবার দাবাখেলায় ওর জিত হয় ; সেইবার দাদা ওকে তার নিজের হাতের আংটি পারিতোষিক দিয়েছিল। মধুসূদন মনে মনে হাসলে। আংটির উপর বিলক্ষণ লোভ দেখছি। এইখানে নিজের সঙ্গে কুমুর সাধর্ম্যের পরিচয় পেয়ে একটু যেন আরাম লাগল। বুঝলে, সময়ে অসময়ে সিথি কণ্ঠহার বালা বাজুর যোগে অভিমানিনীর সঙ্গে ব্যবহারের সোজ৷ পথ পাওয়া যাবে— এই পথে মধুসূদনের প্রভাব না মেনে উপায় নেই, বয়স না হয় কিছু বেশিই হল। নিজের হাত থেকে মন্তবড়ো কমলহীরের একটা আংটি খুলে নিয়ে মধুসূদন হেসে বললে, “ভয় নেই, এর বদলে আর-একটা আংটি তোমাকে পরিয়ে দিচ্ছি।” কুমু আর থাকতে পারলে না, একটু চেষ্টা করেই হাত ছাড়িয়ে নিলে। এইবার মধুসূদনের মনটা কেঁকে উঠল। কর্তৃত্বের খর্বত৷ তাকে সইবে না, শুষ্ক গলায় জোর করেই বললে, “দেখো, এ আংটি তোমাকে খুলতেই হবে।” কুমুদিনী মাথা হেঁট করে চুপ করে রইল, তার মুখ লাল হয়ে উঠেছে। মধুসূদন আবার বললে, “গুনছ ? আমি বলছি ওটা খুলে ফেলা ভালো। দাও অামাকে।” বলে হাতটা টেনে নিতে উদ্যত হল।