পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

38이 রবীন্দ্র-রচনাবলী মা রেগে উঠে মনে মনে বললে, ‘দেবতার মুখে ছাই! যে-দেবতা ওর বিপদ ঘটিয়েছে সেই নাকি ওকে উদ্ধার করবে ! হায় রে ? २8 পরের দিন সকালেই কুমু দাদার কাছ থেকে টেলিগ্রাম পেয়েছে, “ভগবান তোমাকে আশীৰ্বাদ করুন।” সেই টেলিগ্রামের কাগজখানি জামার মধ্যে বুকের কাছে রেখে দিলে। এই টেলিগ্রামে যেন দাদার দক্ষিণ হাতের স্পর্শ। কিন্তু দাদা নিজের শরীরের কথা কেন কিছুই লিখলে না ? তবে কি অসুখ বেড়েছে ? দাদার সব খবরই মুহূর্তে মুহূর্তে যার প্রত্যক্ষগোচর ছিল, আজ তার কাছে সবই অবরুদ্ধ। আজ ফুলশষ্যে, বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। আত্মীয় মেয়ের সমস্তদিন কুমুকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। কিছুতে তাকে একলা থাকতে দিলে না। আজ একলা · থাকবার বড়ো দরকার ছিল। ' শোবার ঘরের পাশেই ওর নাবার ঘর ; সেখানে জলের কল পাতা এবং ধারাস্বানের বর্ণঝরি বসানো। কোনো অবকাশে বাক্স থেকে যুগল-রূপের ফ্ৰেমে-বাধানে৷ পটখানি বের করে স্বানের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। সাদা পাথরের জলচৌকির উপর পট রেখে সামনে মাটিতে বসে নিজের মনে বারবার করে বললে, “আমি তোমারই, আজ তুমিই আমাকে নাও। সে আর কেউ নয়, সে তুমিই, সে তুমিই, সে তুমিই। তোমারই যুগল রূপ প্রকাশ হোক আমার জীবনে। ডাক্তাররা বলছে বিপ্রদাসের ইনফ্লুয়েঞ্জা মু্যমোনিয়ায় এসে দাড়িয়েছে। নবগোপাল একল কলকাতায় এল ফুলশয্যার সওগাত পাঠাবার ব্যবস্থা করতে। খুব ঘটা করেই সওগাত পাঠানো হল । বিপ্রদাস নিজে থাকলে এত আড়ম্বর করত না । কুমুর বিবাহ উপলক্ষে ওর বড়ো বোন চারজনকেই আনতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু খবর রটে গেছে— ঘোষালরা সদব্ৰাহ্মণ নয়। বাড়ির লোক এ-বিয়েতে কিছুতে তাদের পাঠাতে রাজি হল না। কুমুর তৃতীয় বোন যদি বা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে বিয়ের পরদিন কলকাতায় এসে পৌঁছোল, নবগোপাল বললে, “ও বাড়িতে তুমি গেলে আমাদের মান থাকবে না।” বিবাহরাত্রির কথা আজও সে ভুলতে পারে নি। তাই প্রায়-অসম্পৰ্কীয় গুটিকয়েক ছোটাে ছোটাে মেয়ে এক বুড়ি দাসীর সঙ্গে পাঠিয়ে দিলে নিমন্ত্রণ রাখতে। কুমু বুঝলে, সন্ধি এখনও হল না, হয়তো কোনো কালে হবে না ।