পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8२ রবীন্দ্র-রচনাবলী ૨ (t ইতিমধ্যে খামামুন্দরী হাপাতে ইপিাতে মধুকে এসে জানালে, বউ মুছে গেছে।’ মধুসূদনের মনটা দপ করে জলে উঠল ; বললে, “কেন, তার হয়েছে কী ?” “ত| তো বলতে পারি নে, দাদা দাদা করেই বউ হেদিয়ে গেল। ত৷ একবার কি দেখতে যাবে ?” “কী হবে ! আমি তো ওর দাদা নই।” “মিছে রাগ করছ ঠাকুরপো, ওরা বড়োঘরের মেয়ে, পোষ মানতে সময় লাগবে ।” “রোজ রোজ উনি মুছে যাবেন আর আমি ওঁর মাথায় কবিরাজি তেল মালিশ করব এইজন্যেই কি ওঁকে বিয়ে করেছিলুম ?” 曾 “ঠাকুরপো, তোমার কথা শুনে হাসি পায়। তা দোষ হয়েছে কী, আমাদের কালে কথায় কথায় মানিনীর মান ভাঙাতে হত, এখন না হয় মুছে ভাঙাতে হবে।” মধুসূদন গেী হয়ে বসে রইল। শু'মাসুন্দরী বিগলিত করুণায় কাছে এসে হাত ধরে বললে, “ঠাকুরপো, অমন মন খারাপ কোরো না, দেখে সইতে পারি নে ৷” মধুসূদনের এত কাছে গিয়ে ওকে সাস্বনা দেয় ইতিপূর্বে এমন সাহস খামার ছিল না। প্ৰগলভ খামা ওর কাছে ভারি চুপ করে থাকত ; জানত মধুসূদন বেশি কথা সইতে পারে না। মেয়েদের সহজ বুদ্ধি থেকে শু্যাম বুঝেছে মধুসূদন আজ সে-মধুসুদন নেই। আজ ও দুর্বল, নিজের মর্যাদা সম্বন্ধে সতর্কত ওর নেই। মধুর হাতে হাত দিয়ে বুঝল এটা ওর খারাপ লাগে নি। নববধূ ওর অভিমানে যে ঘ দিয়েছে, কোনো একটা জায়গা থেকে চিকিৎসা পেয়ে ভিতরে ভিতরে একটু আরাম বোধ হয়েছে। শু্যাম অস্তত ওকে অনাদর করে না, এটা তো নিতান্ত তুচ্ছ কথা নয়। স্যাম কি কুমুর চেয়ে কম স্বন্দরী, না হয় ওর রঙ একটু কালো— কিন্তু ওর চোখ, ওর চুল, ওর রসালে ঠোট । শু্যামা বলে উঠল, “ওই আসছে বউ, আমি যাই ভাই। কিন্তু দেখে ওর সঙ্গে রাগারগি কোরো না, আহা ও ছেলেমানুষ !” 卿 কুমু ঘরে ঢুকতেই মধুসুদন আর থাকতে পারলে না, বলে উঠল, “বাপের বাড়ি থেকে মুছে অভ্যেস করে এসেছ বুঝি ? কিন্তু আমাদের এখানে ওটা চলতি নেই। তোমাদের ওই কুরনগরি চাল ছাড়তে হবে।” কুমু নির্নিমেষ চোখ মেলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল, একটি কথাও বললে না। মধুসুদন ওর মৌন দেখে আরও রেগে গেল। মনের গভীর তলায় এই মেয়েটির