পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 রবীন্দ্র-রচনাবলী “ঠাগুীয় হিমে বাইরে এখানে দাড়িয়ে কী করছ ? চলে। ঘরে ।” কুমু অসংকোচে মধুসূদনের মুখের দিকে চেয়ে রইল। মধুসূদনের মধ্যে যেটুকু প্রভুত্বের জোর ছিল তা গেল উড়ে। কুমুর বঁ হাত ধরে আস্তে আস্তে বললে, “এসো ঘরে ।” bجي কুমুর ডান হাতে তার দাদার আশীর্বাদের সেই টেলিগ্রাম ছিল, সেটা সে বুকে চেপে ধরল। স্বামীর হাত থেকে হাত টেনে নিলে না, নীরবে ধীরে ধীরে শোবার ঘরে ফিরে গেল । ২৬ পরদিন ভোরে যখন কুমু বিছানায় উঠে বসেছে তখন ওর স্বামী ঘুমোচ্ছে। কুমু তার মুখের দিকে চাইলে না, পাছে মন বিগড়ে যায়। অতি সাবধানে উঠে পায়ের কাছে প্রণাম করলে, তার পরে স্বান করবার ঘরে গেল। স্নান সারা হলে পর পিছন দিকের দরজা খুলে গিয়ে বসল ছাদে, তখন কুয়াশার ভিতর দিয়ে পূর্ব-আকাশে একটা মলিন সোনার রেখা দেখা দিয়েছে। বেলা হল, রোদর উঠল যখন, কুমু আস্তে আস্তে শোবার ঘরে ফিরে এসে দেখলে তার স্বামী তখন চলে গেছে। আয়নার দেরাজের উপর তার পুতির কাজ-করা থলিটি ছিল। তার মধ্যে দাদার টেলিগ্রামের কাগজটি রাখবার জন্যে সেটা খুলেই দেখতে পেলে সেই নীলার আংটি নেই। সকালবেলাকার মানসপুজার পর তার মুখে যে একটি শান্তির ভাব এসেছিল সেটা মিলিয়ে গিয়ে চোখে আগুন জ্বলে উঠল। কিছু মিষ্টি ও দুধ খাওয়াবে বলে ডাকতে এল মোতির মা। কুমুর মুখে জবাব নেই, যেন কঠিন পাথরের মূর্তি ! মোতির মা ভয় পেয়ে পাশে এসে বসল—জিজ্ঞাসা করলে, “কী হয়েছে, ভাই ?” কুমুর মুখে কথা বেরোল না, ঠোট কাপতে লাগল। “বলে দিদি, আমাকে বলে, কোথায় তোমার বেজেছে ?” কুমু রুদ্ধপ্রায় কণ্ঠে বললে, “নিয়ে গেছে চুরি করে।” “কী নিয়ে গেছে দিদি ?” “আমার আংটি— আমার দাদার আশীর্বাদী আংটি ।” “কে নিয়ে গেছে ?” কুমু উঠে দাড়িয়ে কারও নাম না করে বাইরের অভিমুখে ইঙ্গিত করলে।