পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢ ० 强 রবীন্দ্র-রচনাবলী ওর দুই দাদার ছবি— আর একখানি কাগজের টুকরো, বিপ্রদাসের হাতে-লেখা গীতার এই শ্লোক— যৎ করোষি যদশাসি যজুহোষি দদাসি যৎ, যৎ তপস্যসি, কৌন্তেয়, তং কুরুত্ব মদৰ্পণম্। ঈর্ষায় মধুসূদনের মন ক্ষতবিক্ষত হতে লাগল। দাতে দাতে লাগিয়ে বিপ্রদাসকে মনে মনে লোপ করে দিলে। সেই লুপ্তির দিন একদা আসবে ও নিশ্চয় জানে – অল্প অল্প করে স্কু আঁটতে হবে ; কিন্তু কুমুদিনীর যে-উনিশটা বছর মধুসূদনের আয়ত্তের বাইরে, সেইটে বিপ্রদাসের হাত থেকে এই মুহূর্তেই ছিনিয়ে নিতে পারলে তবেই ও মনে শাস্তি পায়। আর কোনো রাস্তা জানে না জবরদস্তি ছাড়া। পুতির থলিটি আজ সাহস করে ফেলে দিতে পারলে না— যেদিন আংটি হরণ করে নিয়েছিল সেদিন ওর সাহস আরও বেশি ছিল ; তখনও জানত কুমুদিনী সাধারণ মেয়েরই মতে সহজেই শাসনের অধীন, এমন-কি, শাসনই পছন্দ করে। আজ বুঝেছে কুমুদিনী যে কী করতে পারে এবং পারে না কিছু বলবার জো নেই। : কুমুদিনীকে নিজের জীবনের সঙ্গে শক্ত বাধনে জড়াবার একটি মাত্র রাস্ত আছে, সে কেবল সস্তানের মায়ের রাস্তা । সেই কল্পনাতেই ওর সাত্বনা । এমনি করে ঘড়িতে পাচটা বাজল। কিন্তু শীতরাত্রির অন্ধকার তখনও যায় নি। আর কিছুক্ষণ পরেই আলে উঠবে, আজকের রাত হবে ব্যর্থ। মধুসূদন তাড়াতাড়ি ঘর ছেড়ে চলল – ফরাশখানার সামনে পায়ের শব্দটা বেশ একটু স্পষ্টই ধ্বনিত করলে — দরজাটা শব্দ করেই খুললে— দেখলে ভিতরে কুমু নেই। কোথায় সে ? উঠোনের কলে জল-পড়ার শব্দ কানে এল। বারান্দায় দাড়িয়ে দেখলে, যত রাজ্যের পুরানো অব্যবহার্য মরচে-পড়া পিলমুজগুলো নিয়ে কুমু তেঁতুল দিয়ে মাজছে। এ কেবল ইচ্ছা করে কাজের ভার বাড়াবার চেষ্টা, শীতের ভোরবেলার নিদ্রাহীন দুঃখকে বিস্তারিত করে তোলা । মধুসুদন উপরের বারান্দা থেকে অবাক হয়ে দাড়িয়ে দেখতে লাগল। অবলার বলকে কী করে পরাস্ত করতে হয় এই তার ভাবনা । সকালে উঠে বাড়ির লোকে যখন দেখবে কুমু পিলমুজ মাজছে কী ভাববে | যে চাকরের উপরে মাজাঘষার ভার, সেই বা কী মনে করবে ? বিশ্বযুদ্ধ লোকের কাছে তাকে হাস্যাম্পদ করবার এমন তো উপায় আর নেই। একবার মধুসূদনের মনে হল কলতলায় গিয়ে কুমুর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেয়। কিন্তু সকালবেলায় সেই উঠানের মাঝখানে দুজনে বচসা করবে আর বাড়িসুদ্ধ লোকে