পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ミQ> তামাশা দেখতে বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে আসবে এই প্রহসনট কল্পনা করে পিছিয়ে গেল । মেজো ভাই নবীনকে ডাকিয়ে বললে, “বাড়িতে কী সব ব্যাপার হচ্ছে চোখ রাখ কি ?” নবীন ছিল বাড়ির ম্যানেজার। সে ভয় পেয়ে বললে, “কেন দাদা, কী হয়েছে ?” নবীন জানে, দাদার যখন রাগ করবার একটা কারণ ঘটে তখন শাসন করবার একটা মানুষ চাই । দোষী যদি ফসকে যায় তো নির্দোষী হলেও চলে— নইলে ডিসিপ্লিন থাকে না, নইলে সংসারে ওর রাষ্ট্ৰতন্ত্রের প্রেসটিজ চলে যায়। মধুসুদন বললে, “বড়োবউ যে পাগলের মতো কাগুটা করতে বসেছে, তার কারণটা কী সে কি আমি জানি নে মনে কর ?” বড়োবউ কী পাগলামি করছে সে প্রশ্ন করতে নবীন সাহস করলে না পাছে খবর না-জানাটাই একটা অপরাধ বলে গণ্য হয়। মধুসুদন বললে, “মেজেবিউ ওর মাথা বিগড়োতে বসেছেন সন্দেহ নেই।” বহু সংকোচে নবীন বলতে চেষ্টা করলে, “না, মেজেবিউ তো—” মধুসুদন বললে, “আমি স্বচক্ষে দেখেছি।” এর উপরে আর কথা খাটে না । স্বচক্ষে দেখার মধ্যে সেই কাগজচাপার ইতিহাসটা নিহিত ছিল। २b” মোতির মা যখনই কুমুকে আকৃত্রিম ভালোবাসার সঙ্গে আদর্যত্ন করতে প্রবৃত্ত হয়েছিল তখনই নবীন বুঝেছিল এটা সইবে না ; বাড়ির মেয়েরা এই নিয়ে লাগালাগি করবে। নবীন ভাবলে সেই রকমের একটা কিছু ঘটেছে। কিন্তু মধুসূদনের আন্দাজি অভিযোগ সম্বন্ধে প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই ; তাতে জেদ বাড়িয়ে দেওয়া হয় । ব্যাপারটা কী হয়েছে মধুসূদন তা স্পষ্ট করে বললে না— বোধ করি বলতে লজ্জা করছিল ; কী করতে হবে তাও রইল অস্পষ্ট, কেবল ওর মধ্যে যেটুকু স্পষ্ট সে হচ্ছে এই যে, সমস্ত দায়িত্বটা মেজেবিউয়েরই স্বতরাং দাম্পত্যের আপেক্ষিক মর্যাদা অনুসারে জবাবদিহির ল্যাজামুড়োর মধ্যে মুড়োর দিকটাই নবীনের ভাগ্যে। নবীন গিয়ে মোতির মাকে বললে, “একটা ফ্যাসাদ বেধেছে।” “কেন, কী হয়েছে ?” “সে জানেন অন্তর্যামী, আর দাদা, আর সম্ভবত তুমি ; কিন্তু তাড়া আরম্ভ হয়েছে আমার উপরেই।” St S ^