পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 را به করেছিল আজ হয়তে কুমুকে শোবার ঘরে দেখতে পাবে। সেইজন্যেই নিয়মিত সময় অতিক্রম করেই মধুসূদন এল। স্বস্থ শরীরে চিরাভ্যাসমত একেবারে ঘড়িধরা সময়ে মধুসুদন ঘুমিয়ে পড়ে, এক মুহূর্ত দেরি হয় না। পাছে আজ তেমনি ঘুমিয়ে পড়ার পর কুমু ঘরে আসে তার পরে চলে যায়, এই ভয়ে বিছানায় শুতে গেল না। সোফায় খানিকট বসে রইল, ছাদে খানিকট পায়চারি করতে লাগল । মধুসূদনের ঘুমোবার সময় ন’টা— আজ একসময়ে চমকে উঠে শুনলে তার দেউড়ির ঘণ্টায় এগারোটা বাজছে। লজ্জা বোধ হল। কিন্তু বিছানার সামনে দু-তিনবার এসে চুপ করে দাড়িয়ে থাকে, কিছুতে শুতে যেতে প্রবৃত্তি হয় না। তখন স্থির করলে বাইরের ঘরে গিয়ে সেই রাত্রেই নবীনের সঙ্গে কিছু বোঝাপড়া করে নেবে । বাইরের ঘরের সামনের বারান্দায় পৌছিয়ে দেখে ঘরে তখনও আলে জলছে। সেও ঘরে ঢুকতে যাচ্ছে এমন সময়ে দেখে নবীন লণ্ঠন হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। দিনের বেলা হলে দেখতে পেত এক মুহূর্তে নবীনের মুখ কী রকম ফ্যাকাশে হয়ে গেল । h মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “এত রাত্রে তুমি যে এখানে ?” নবীনের মাথায় বুদ্ধি জোগাল, সে বললে, “শুতে যাবার আগেই তো আমি ঘড়িতে দম দিয়ে যাই, আর তারিখের কার্ড ঠিক করে দিই।” “আচ্ছা, ঘরে এসে শোনে।” নবীন ত্রস্ত হয়ে কাঠগড়ার আসামির মতো চুপ করে দাড়িয়ে রইল। মধুসূদন বললে, “বড়োবউয়ের কানে মন্ত্র ফেসিলাবার কেউ থাকে এটা আমি পছন্দ করি নে। আমার ঘরের বউ আমার ইচ্ছেমত চলবে, আর-কারও পরামর্শমত চলবে না— এইটে হল নিয়ম।” নবীন গম্ভীরভাবে বললে, “সে তো ঠিক কথা।” “তাই আমি বলছি, মেজেবিউকে দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে ।” নবীন খুব যেন নিশ্চিন্ত হল এমনি ভাবে বললে, “ভালো হল দাদা, আমি আরও ভাবছিলুম পাছে তোমার মত না হয়।” { মধুসূদন বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “তার মানে ?” 叠 নবীন বললে, “ক’দিন ধরে দেশে যাবার জন্যে মেজেবিউ অস্থির করে তুলেছে, জিনিসপত্র সব গোছানোই আছে, একটা তালো দিন দেখলেই বেরিয়ে পড়বে।” বলা বাহুল্য, কথাটা সম্পূর্ণ বানানো। তার বাড়িতে মধুসূদন যাকে ইচ্ছে