পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २१¢ C)○ এ দিকে নবীন ও মোতির মা বুঝেছে এবারে ভিত গেল ভেঙে, পালিয়ে বাচবার আশ্রয় ভাদের আর কোথাও রইল না। মোতির মা বললে, “এখানে যেরকম খেটে খাচ্ছি সেরকম খেটে খাবার জায়গা সংসারে আমার মিলবে। আমার দুঃখ এই যে, আমি গেলে এ বাড়িতে দিদিকে দেখবার লোক অণর কেউ থাকবে না।” নবীন বললে, “দেখো মেজেবিউ, এ সংসারে অনেক লাঞ্ছনা পেয়েছি, এ বাড়ির অন্নজলে অনেকবার অামার অরুচি হয়েছে। কিন্তু এইবার অসহ্য হচ্ছে যে, এমন বউ ঘরে পেয়েও কী করে তাকে নিতে হয়, রাখতে হয়, তা দাদা বুঝলে না— সমস্ত নষ্ট করে দিলে। ভালো জিনিসের ভাঙা টুকরো দিয়েই অলক্ষ্মী বাস। বাধে।” মোতির মা বললে, “সে কথা তোমার দাদার বুঝতে দেরি হবে না। কিন্তু , তখন ভাঙা আর জোড়া লাগবে না।” নবীন বললে, “লক্ষ্মণ-দেওর হবার ভাগ্য আমার ঘটল না, এইটেই আমার মনে বাজছে। যা হোক, তুমি জিনিসপত্তর এখনই গুছিয়ে ফেলে, এ বাড়িতে যখন সময় আসে তখন অণর তর সয় না।” মোতির মা চলে গেল। নবীন আর থাকতে পারলে না, আস্তে আস্তে তার বউদিদির ঘরের বাইরে এসে দেখলে কুমু তার শোবার ঘরের মেজের বিছানার উপর পড়ে আছে। যে চিঠিখানা ছিড়ে ফেলেছে তার বেদন কিছুতেই মন থেকে যাচ্ছে না। নবীনকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসল। নবীন বললে, “বউদিদি, প্রণাম করতে এসেছি, একটু পায়ের ধুলো দাও।” বউদিদির সঙ্গে নবীনের এই প্রথম কথাবার্তা। কুমু বললে, “এসো, বোসে।” নবীন মাটিতে বসে বললে, “তোমাকে সেবা করতে পারব এই খুশিতে বুক ভরে উঠেছিল। কিন্তু নবীনের কপালে এতটা সৌভাগ্য সইবে কেন ? ক-টা দিন মাত্র তোমাকে পেয়েছি, কিছুই করতে পারি নি এই আপসোস মনে রয়ে গেল।” কুমু জিজ্ঞাসা করলে, “কোথায় যাচ্ছ তোমরা?” নবীন বললে, "দাদা আমাদের দেশেই পাঠাবে। এর পরে তোমার সঙ্গে বোধ হয় আর দেখা হবার সুবিধা হবে না, তাই প্রণাম করে বিদায় নিতে এসেছি।” বলে যেই সে প্রণাম করলে মোতির মা ছুটে এসে বললে, “শীঘ্ৰ চলে এসো। কর্তা তোমার খোজ করছেন।”