পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१७ রবীন্দ্র-রচনাবলী নবীন তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল। মোতির মাও গেল তার সঙ্গে । সেই বাইরের ঘরে দাদা তার ডেস্কের কাছে বসে ; নবীন এসে দাড়াল। অন্যদিনে এমন অবস্থায় তার মুখে যেরকম আশঙ্কার ভাব থাকত আজ তা কিছুই নেই। মধুসূদন জিজ্ঞাস করলে, “ডেস্কের চিঠির কথা বড়োবউকে কে বললে ?” নবীন বললে, “আমিই বলেছি।” “হঠাৎ তোমার এত সাহস বেড়ে উঠল কোথা থেকে ?” “বড়োবউরানী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন র্তার দাদার চিঠি এসেছে কি না। এ বাড়ির চিঠি তো তোমার কাছে এসে প্রথমটা ওই ডেস্কেই জমা হয়, তাই আমি দেখতে এসেছিলুম।” “আমাকে জিজ্ঞাসা করতে সৰুর সয় নি ?” “তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাই —” "তাই আমার হুকুম উড়িয়ে দিতে হবে ?” “তিনি তো এ বাড়ির কত্রী, কেমন করে জানব তার হুকুম এখানে চলবে না ? তিনি যা বলবেন আমি তা মানব না এতবড়ো আস্পর্ধা আমার নেই। এই আমি তোমার কাছে বলছি, তিনি তো শুধু আমার মনিব নন তিনি আমার গুরুজন, তাকে যে মানব সে নিমক খেয়ে নয়, সে অামার ভক্তি থেকে ।” ‘নবীন, তোমাকে তো এতটুকু বেলা থেকে দেখছি, এ-সব বুদ্ধি তোমার নয়। জানি তোমার বুদ্ধি কে জোগায়। যাই হোক, আজ আর সময় নেই, কাল সকালের ট্রেনে তোমাদের দেশে যেতে হবে।” “যে আজ্ঞে” বলেই নবীন দ্বিরুক্তি না করেই দ্রুত চলে গেল । এত সংক্ষেপে যে আজ্ঞে মধুসূদনের একটুও ভালে লাগল না। নবীনের কান্নাকাটি করা উচিত ছিল ; যদিও তাতে মধুসূদনের সংকল্পের ব্যত্যয় হত না। নবীনকে আবার ফিরে ডেকে বললে, “মাইনে চুকিয়ে নিয়ে যাও, কিন্তু এখন থেকে তোমাদের খরচপত্র জোগাতে পারব না।” নবীন বললে, “তা জানি, দেশে আমার অংশে যে জমি আছে তাই অামি চাষ করে খাব।” বলেই অন্ত কোনে কথার অপেক্ষ না করেই সে চলে গেল । মামুষের প্রকৃতি নানা বিরুদ্ধ ধাতু মিশোল করে তৈরি, তার একটা প্রমাণ এই যে, মধুসূদন নবীনকে গভীরভাবে স্নেহ করে। তার অন্য দুই ভাই রজবপুরে বিষয়সম্পত্তির কাজ নিয়ে পাড়াগায়ে পড়ে আছে, মধুসূদন তাদের বড়ে একটা খোজ