পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१b” রবীন্দ্র-রচনাবলী অথচ এ কথা বলবারও জোর মনে নেই যে তার ভাগ্যে একজন সাধারণ মেয়ে হলেই ভালো হত, যার উপরে তার শাসন খাটত । মধুসূদন কেবল একটা বিষয়ে টেক্কা দিতে পারে। সে তার ধনে। তাই আজ সকালেই ঘরে জহরি এসেছিল। তার কাছ থেকে তিনটে আংটি নিয়ে রেখেছে, দেখতে চায় কোনটাতে কুমুর পছন্দ । সেই আংটির কোঁটা তিনটি পকেটে নিয়ে সে তার শোবার ঘরে গেল। একটা চুনি, একটা পান্ন, একটা হীরের আংটি। মধুসূদন মনে মনে একটি দৃশু কল্পনাযোগে দেখতে পাচ্ছে। প্রথমে সে যেন চুনির আংটির কৌটা অতি ধীরে ধীরে খুললে, কুমুর লুব্ধ চোখ উজ্জল হয়ে উঠল। তার পরে বেরোল পান্না, তাতে চক্ষু আরও প্রসারিত। তার পর হীরে, তার বহুমূল্য উজ্জ্বলতায় রমণীর বিস্ময়ের সীমা নেই। মধুসূদন রাজকীয় গাম্ভীর্যের সঙ্গে বললে, “তোমার যেটা ইচ্ছে পছন্দ করে নাও। হীরেটাই কুমু যখন পছন্দ করলে তখন তার লুব্ধতার ক্ষীণ সাহস দেখে ঈষৎ হাস্য করে মধুসূদন তিনটে আংটিই কুমুর তিন আঙলে পরিয়ে দিলে। তার পরেই রাত্রে শয়নমঞ্চের যবনিক উঠল । মধুসূদনের অভিপ্রায় ছিল এই ব্যাপারটা আজ রাত্রের আহারের পর হবে। কিন্তু দুপুরবেলাকার দুর্যোগের পর মধুসূদন আর সবুর করতে পারলে না। রাত্রের ভূমিকাটা আজ অপরাহ্লে সেরে নেবার জন্যে অস্তঃপুরে গেল । গিয়ে দেখে কুমু একটা টিনের তোরঙ্গ খুলে শোবার ঘরের মেজেতে বসে গোছাচ্ছে। পাশে জিনিসপত্র কাপড়চোপড় ছড়ানো । “এ কী কাগু ! কোথাও যাচ্ছ নাকি ?” “ši lo “কোথায় ?” “রজবপুরে।” “তার মানে কী হল ?” “তোমার দেরাজ খোলা নিয়ে ঠাকুরপোদের শাস্তি দিয়েছ। সে শাস্তি আমারই পাওনা।” | ‘যেয়ে না বলে অনুরোধ করতে বসা একেবারেই মধুসূদনের স্বভাববিরুদ্ধ। তার মনটা প্রথমেই বলে উঠল— যাক-না দেখি কতদিন থাকতে পারে। এক মুহূর্ত দেরি না করে হন হন করে ফিরে চলে গেল ।