পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २b-१ মধুসূদন তাড়াতাড়ি তার হাত ধরে তুলে চৌকির উপরে বসিয়ে বললে, “কী দোষ করেছ যে তোমাকে মাপ করব ?” কুমু বললে, “এখনও আমার মন তৈরি হয় নি। আমাকে একটুখানি সময় দাওঁ ৷” মধুসূদনের মনটা শক্ত হয়ে উঠল ; বললে, “কিসের জন্যে সময় দিতে হবে বুঝিয়ে বলে ।” ‘o “ঠিক বলতে পারছি নে, কাউকে বুঝিয়ে বলা শক্ত—” মধুসূদনের কণ্ঠে আর রস রইল না। সে বললে, “কিছুই শক্ত না। তুমি বলতে চাও, আমাকে তোমার ভালো লাগছে না।” কুমুর পক্ষে মুশকিল হল। কথাটা সত্যি অথচ সত্যি নয়। হৃদয় ভরে নৈবেদ্য দেবার জন্যেই সে পণ করে আছে, কিন্তু সে নৈবেদ্য এখনও এসে পৌঁছোল না । মন বলছে, একটু সবুর করলেই, পথে বাধা না দিলে, এসে পৌছোবে ; দেরি যে আছে তাও না। তবুও এখনও ডাল যে শূন্ত সে কথা মানতেই হবে। কুমু বললে, “তোমাকে ফাকি দিতে চাই নে বলেই বলছি, একটু আমাকে সময় দাও।” মধুসুদন ক্রমেই অসহিষ্ণু হতে লাগল— কড়া করেই বললে, “সময় দিলে কী সুবিধে হবে! তোমার দাদার সঙ্গে পরামর্শ করে স্বামীর ঘর করতে চাও ” মধুসূদনের তাই বিশ্বাস। সে ভেবেছে বিপ্রদাসের অপেক্ষাতেই কুমুর সমস্ত ঠেকে আছে। দাদ। যেমনটি চালাবে, ও তেমনি চলবে। বিদ্রুপের স্বরে বললে, “তোমার দাদা তোমার গুরু !” কুমুদিনী তখনই মাটি থেকে উঠে দাড়িয়ে বললে, “হ্যা, আমার দাদা আমার গুরু।” “র্তার হুকুম না হলে আজ কাপড় ছাড়বে না, বিছানায় শুতে আসবে না ! তাই নাকি ?” । কুমুদিনী হাতের মুঠে শক্ত করে কাঠ হয়ে দাড়িয়ে রইল। “তা হলে টেলিগ্রাফ করে হুকুম আনাই— রাত অনেক হল ।” কুমু কোনো জবাব না দিয়ে ছাতে যাবার দরজার দিকে চলল। মধুসূদন গর্জন করে ধমকে উঠে বললে, “যেয়ে না বলছি।” কুমু তখনই ফিরে দাড়িয়ে বললে, “কী চাও, বলে ।” “এখনই কাপড় ছেড়ে এসো।” ঘড়ি খুলে বললে, “পাচ মিনিট সময় দিচ্ছি।” কুমু তখনই নাবার ঘরে গিয়ে কাপড় ছেড়ে শাড়ির উপর একখানা মোট চাদর