পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २:४१ হয়ে চুপ করে রইল। এর চেয়ে হাসা ভালো ছিল। মধুসূদন বললে, “এলাচদান লুকিয়ে খাবার কী দরকার? এতে লজ্জা কী বলে! রোজ আনিয়ে দেব— কত চাও ? আমাকে আগে বললে না কেন ?” কুমু বললে, “তুমি পারবে না আনিয়ে দিতে।” “পারব না। অবাক করলে তুমি।” “না, পারবে না।” “অসম্ভব দাম নাকি এর ” “হা, টাকায় মেলে না।” ~ শুনেই মধুর মাথায় চট করে একটা সন্দেহ জাগল— বললে, “তোমার দাদা পার্সেল করে পাঠিয়েছেন বুঝি ?” এ প্রশ্নের জবাব দিতে কুমুর ইচ্ছে হল না। ফলদানিটা ঠেলে দিয়ে চলে যাবার • জন্যে উঠে দাড়াল । মধুসূদন হাত ধরে আবার জোর করে তাকে বসিয়ে দিলে। মধুসূদনকে কোনো কথা বলতে না দিয়েই কুমু তাকে প্রশ্ন করলে, "দাদার বাড়ি থেকে তোমার কাছে লোক এসেছিল তার খবর নিয়ে ?” এ কথাটা কুমু আগেই শুনে ফেলেছে জেনে মধুর মন ভারি বিরক্ত হয়ে উঠল। বললে, “সেই খবর দেবার জন্যেই তো আজ সকালে তোমার কাছে এসেছি।” বলা বাহুল্য এটা মিথ্যে কথা । "দাদা কবে আসবেন ?” “হপ্তাখানেকের মধ্যে ।” মধু নিশ্চিত জানত কালই বিপ্রদাস আসবে, হস্তাখানেক কথাটা ব্যবহার করে খবরটাকে অনির্দিষ্ট করে রেখে দিলে । "দাদার শরীর কি আরও খারাপ হয়েছে ?” “ন, তেমন কিছু তো শুনলুম না।” এ কথাটার মধ্যেও একটুখানি পাশ-কাটানো ছিল। বিপ্রদাস চিকিৎসার জন্যই .কলকাতায় আসছে— তার অর্থ, শরীর অন্তত ভালো নেই। "দাদার চিঠি কি এসেছে ?” “চিঠির বাক্স তো এখনও খুলি নি, যদি থাকে তোমাকে পাঠিয়ে দেব।” কুমু মধুসূদনের কথা অবিশ্বাস করতে আরম্ভ করে নি, স্বতরাং এ কথাটাও মেনে নিলে । “দাদার চিঠি এসেছে কি না একবার খোজ করবে কি ?”