পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\3) ο b- রবীন্দ্র-রচনাবলী ভক্তি ততই বেড়ে উঠল। জীবনটা আগাগোড়া ঋষিবাক্য মূর্তিমান । নিজের বুকের উপর হাত বুলিয়ে দেখলে, দেহটা অমুস্বার-বিসর্গ-তদ্ধিত-প্রত্যয়ের মসলা দিয়ে তৈরি কোন তপোবনে লেখা একটা পুথির মতো। তার পর দৈবজের শেষ কথাটা এই যে, মধুসূদনের ঘরে একদা লক্ষ্মীর আবির্ভাব হবে বলে পূর্ব হতেই ঘরে অভাবনীয় সৌভাগ্যের স্বচন। অল্পদিন হল তিনি এসেছেন নববধূকে আশ্রয় করে। এখন থেকে সাবধান। কেননা ইনি যদি মনঃপীড়া পান, ভাগ্য কুপিত হবে। বেঙ্কট শাস্ত্রী বললে, কোপের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। জাতক যদি এখনও সতর্ক না হয় বিপদ বেড়ে চলবে। মধুসুদন স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল। মনে পড়ে গেল বিবাহের দিনই প্রকাও সেই মুনফার খবর ; আর তার কয়দিনের মধ্যেই এই পরাভব। লক্ষ্মী স্বয়ং আসেন সেটা সৌভাগ্য, কিন্তু তার দায়িত্বটা কম ভয়ংকর নয়। ফেরবার সময় মধুসূদন গাড়িতে স্তব্ধ হয়েই বসে রইল। এক সময় নবীন বলে উঠল, “ওই বেঙ্কট শাস্ত্রীর কথা একটুও বিশ্বাস করি নে ; নিশ্চয় ও কারও কাছ থেকে, তোমার সমস্ত খবর পেয়েছে।” “ভারি বুদ্ধি তোমার ! যেখানে যত মানুষ আছে আগেভাগে তার খবর নিয়ে রেখে দিচ্ছে ; সোজা কথা কিনা !” “মানুষ জন্মাবার আগেই তার কোটি কোটি কুষ্ঠি লেখার চেয়ে এটা অনেক সোজা। তৃগুমুনি এত কাগজ পাবেন কোথায়, আর বেঙ্কট স্বামীর ওই ঘরে এত জায়গা হবে কেমন করে ?” “এক আঁচড়ে হাজারটা কথা লিখতে জানতেন তারা ।” “অসম্ভব ।” “যা তোমার বুদ্ধিতে কুলোয় না তাই অসম্ভব। ভারি তোমার সায়ান্স ! এখন তর্ক রেখে দাও, সেদিন ওদের বাড়ি থেকে যে সরকার এসেছিল, তাকে তুমি নিজে গিয়ে ডেকে এনে। আজই, দেরি কোরে না।” দাদাকে ঠকিয়ে নবীনের মনের ভিতরটাতে অত্যন্ত অস্বস্তিবোধ হতে লাগল। ফনিট এত সহজ, এর সফলতাটা দাদার পক্ষে এত হাস্যকর যে, তারই অমর্যাদায় ওকে লজ্জা ও কষ্ট দিলে। দাদাকে উপস্থিতমত ছোটাে অনেক ফাকি অনেকবার দিতে হয়েছে, কিছু মনে হয় নি ; কিন্তু এত করে সাজিয়ে এতবড়ো ফাকি গড়ে তোলার গ্লানি ওর চিত্তকে অশুচি করে রেখে দিলে।