পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ه ده রাত্রি অন্ধকার হয়ে এল— বাইরে সিড়িতে ওই সেই পরিচিত জুতোর শক । নবীন চমকে উঠল, বুঝলে দাদা আসছে। পালিয়ে গেল না, সাহস করে দাদার জন্তে অপেক্ষা করেই রইল। এদিকে কুমুর মন এক মুহূর্তে নিরতিশয় সংকুচিত হয়ে উঠল। এই অদৃশু বিরোধের ধাক্কাটা এমন প্রবল বেগে যখন তার প্রত্যেক নাড়িকে চমকিয়ে তুললে বড়ো ভয় হল । এ পাপ কেন তাকে এত দুর্জয় বলে পেয়ে বসেছে ? t; হঠাৎ কুমু নবীনকে জিজ্ঞাসা করলে, “ঠাকুরপো, কাউকে জান যিনি আমাকে গুরুর মতো উপদেশ দিতে পারেন ?” “কী হবে বউরানী ?” "নিজের মনকে নিয়ে যে পেরে উঠছি নে ৷” “সে তোমার মনের দোষ নয় ।” “বিপদটা বাইরের, দোষটা মনের, দাদার কাছে এই কথা বার বার শুনেছি।” “তোমার দাদাই তোমাকে উপদেশ দেবেন—ভয় কোরো না ।” “সেদিন আমার আর আসবে না।” মধুসূদনের বিষয়বুদ্ধির সঙ্গে তার ভালোবাসার আপস হয়ে যেতেই সেই ভালোবাসা মধুসূদনের সমস্ত কাজকর্মের উপর দিয়েই যেন উপছে বয়ে যেতে লাগল। কুমুর স্বন্দর মুখে তার ভাগ্যের বরাভয় দান। পরাভবটি কেটে যাবে আজই পেল তার আভাস। কাল যারা বিরুদ্ধে মত দিয়েছিল আজ তাদেরই মধ্যে কেউ কেউ স্বর ফিরিয়ে ওকে চিঠি লিখেছে। মধুসূদন যেই তালুকটা নিজের নামে কিনে নেবার প্রস্তাব করলে অমনি কারও কারও মনে হল ঠকলুম বুঝি। কেউ কেউ এমনও ভাব প্রকাশ করলে যে, কথাটা আর একবার বিচার করা উচিত । গরহাজির অপরাধে আপিসের দারোয়ানের অর্ধেক মাসের মাইনে কাটা গিয়েছিল, আজ টিফিনের সময় মধুসূদনের পা জড়িয়ে ধরবামাত্র মধুসূদন তাকে মাপ করে দিলে। মাপ করবার মানে নিজের পকেট থেকে দারোয়ানের ক্ষতিপূরণ ; যদিচ খাতায় জরিমানা রয়ে গেল। নিয়মের ব্যত্যয় হবার জো নেই। ! আজকের দিনটা মধুর পক্ষে বড়ো আশ্চর্ষের দিন। বাইরে আকাশটা মেঘে ঘোলা, টিপ টপ করে বৃষ্টি পড়ছে, কিন্তু এতে করে ওর ভিতরের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিলে। আপিস থেকে ফিরে এসে রাত্রে আহারের সময়ের পূর্বে পর্যন্ত মধুসূদন বাইরের ঘরে কাটাত। বিয়ের পরে কয়দিন অসময়ে নিয়মের বিরুদ্ধে অন্তঃপুরে যাবার বেলায় লোকের দৃষ্টি এড়াবার চেষ্টা করেছে। আজ সশব্দ পদক্ষেপে বাড়িসুদ্ধ