পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী কুমু খুশি হয়ে উঠে বললে, “এসো, এসে ঠাকুরপো ।” “সন্ধ্যাবেলাকার ঘরের আলোটিকে ঘরে দেখতে পেলুম না, তাই খুজতে বেরিয়েছি।” মোতির মা বললে, “হায় হয়, মণিহারা ফণী যাকে বলে ।” *কে মণি আর কে ফণী তা চক্র নাড়া দেখলেই বোঝা যায়, কী বল বউরানী।” “আমাকে সাক্ষী মেনে না ঠাকুরপো ।” “জানি, তা হলে আমি ঠকব ।” “ত তোমার হারাধনকে তুমি উদ্ধার করে নিয়ে যাও, আমি ধরে রাখব না।” “হারাধনের জন্যে ওঁর কোনো উৎসাহ নেই দিদি, ছুতো করে বউরানীর চরণ দশন করতে এসেছেন।”

  • ছুতোর কি কোনো দরকার আছে ? চরণ আপনি ধরা দিয়েছে। সবচেয়ে য। অসাধ্য তার সাধনা করবে কে ? সে যখন আসে সহজেই আসে। পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ আছে আমার চেয়ে যোগ্য, তবু অমন সুন্দর পা দুখানি আমিই পারলুম ছুতে, তার তো পারলে না। নবীনের জন্ম সার্থক হয়ে গেল বিনামূল্যে ।”

“আঃ, কী বল ঠাকুরপো, তার ঠিক নেই। তোমার এনসাইক্লোপীডিয়া থেকে বুঝি—” “অমন কথা বলতে পারবে না, বউরানী। চরণ বলতে কী বোঝায় তা ওরা জানবে কী করে ? ছাগলের খুরের মতো সরু সরু ঠেকোওআল জুতোর মধ্যে লক্ষ্মীদের পা কড়া জেনানার মধ্যে ওরা বন্দী করে রেখেছে। সাইক্লোপীডিয়াওঅালার সাধ্য কী পায়ের মহিমা বোঝে। লক্ষ্মণ চোদটী বৎসর কেবল সীতার পায়ের দিকে তাকিয়েই নির্বাসন কাটিয়ে দিলেন, তার মানে আমাদের দেশের দেওররাই জানে। তা পায়ের উপর শাড়ি টেনে দিচ্ছ তো দাও । ভয় নেই তোমার, পদ্ম সন্ধেবেলায় মুদে থাকে বলে তো বরাবর মুদেই থাকে না— আবার তে পাপড়ি খোলে।” “ভাই মনের কথা, এমনিতরো স্তব করেই বুঝি ঠাকুরপে তোমার মন ভুলিয়েছেন ?" “একটুও না দিদি, মিষ্টি কথার বাজে খরচ করবার লোক নন উনি।" “স্তুতির বুঝি দরকার হয় না ?” o “বউরানী, স্তুতির ক্ষুধা দেবীদের কিছুতেই মেটে না, দরকার খুব আছে। কিন্তু শিবের মতো আমি তো পঞ্চানন নই, এই একটিমাত্র মুখের স্তুতি পুরোনো হয়ে গেছে, এতে উনি আর রস পাচ্ছেন না।”