পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ৩২৭ এমন সময় মুরলী বেয়ারা এসে নবীনকে খবর দিলে, “কর্তা-মহারাজ বাইরের আপিসঘরে ডাক দিয়েছেন।” শুনে নবীনের মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল মধুসুদন আজ আপিস থেকে ফিরেই একেবারে সোজা তার শেবার ঘরে এসে উপস্থিত হবে। নৌকো বুঝি আবার ঠেকে গেল চড়ায়। নবীন চলে গেলে মোতির মা আস্তে আস্তে বললে, “বড়োঠাকুর কিন্তু তোমাকে ভালোবাসেন সে কথা মনে রেখে৷ ” কুমু বললে, “সেইটেই তো আমার আশ্চর্য ঠেকে।” “বল কী, তোমাকে ভালোবাসা আশ্চর্য কেন ? উনি কি পাথরের ?” “আমি ওঁর যোগ্য না ।” “তুমি যার যোগ্য নও সে পুরুষ কোথায় আছে ?” *ওঁর কতবড়ে শক্তি, কত সম্মান, কত পাকা বুদ্ধি, উনি কত মস্ত মানুষ । আমার মধ্যে উনি কতটুকু পেতে পারেন ? আমি যে কী অসম্ভব কাচ, তা এখানে এসে দুদিনে বুঝতে পেরেছি। সেইজন্যেই যখন উনি ভালোবাসেন তখনই আমার সবচেয়ে বেশি ভয় করে। আমি নিজের মধ্যে যে কিছুই খুজে পাই নে। এতবড়ো ফাকি নিয়ে আমি ওঁর সেবা করব কী করে ? কাল রাত্তিরে বসে বসে মনে হল আমি যেন বেয়ারিং লেফাফা, আমাকে দাম দিয়ে নিতে হয়েছে, খুলে ফেললেই ধর পড়বে যে ভিতরে চিঠিও নেই।” “দিদি হাসালে। বড়োঠাকুরের মন্তবড়ো কারবার, কারবারি বুদ্ধিতে ওর সমান কেউ নেই, সব জানি। কিন্তু তুমি কি ওর কারবারের ম্যানেজারি করতে এসেছ যে, যোগ্যতা নেই বলে ভয় পাবে ? বড়োঠাকুর যদি মনের কথা খোলসা করে বলেন তবে নিশ্চয় বলবেন, তিনিও তোমার যোগ্য নন।” “সে কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন।” “বিশ্বাস হয় নি ?” “না। উলটে আমার ভয় হয়েছিল। মনে হয়েছিল আমার সম্বন্ধে ভুল করলেন, সে ভুল ধরা পড়বে।”

  • কেন তোমার এমন মনে হল বলে দেখি।” “বলব ? এই-যে আমার হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেল, এ তো সমস্ত আমি নিজে ঘটিয়ে তুললুম– কিন্তু কী অদ্ভূত মোহে, কী ছেলেমাহুষি করে! যা-কিছুতে আমাকে সেদিন ভুলিয়েছিল তার মধ্যে সমস্তই ছিল ফাকি। অথচ এমন দৃঢ় বিশ্বাস,