পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ 'GGණු “কিসের জন্তে ?” “তুমি যে আমার এ বিছানার উপরে শুতে পেরেছ তার জন্যে ।” কুমু তৎক্ষণাৎ বিছানা থেকে উঠে পাশের ঘরে চলে গেল। মধুসূদন বাইরের ঘরে যাবার পথে দেখলে খামান্বন্দরী সেই বারান্দায় উপুড় হয়ে পড়ে। মধুসূদন পাশে এসে নিচু হয়ে তার হাত ধরে টেনে তোলবার চেষ্টা করে বললে, "কী করছ, খাম ?” অমনি খাম উঠে বসে মধুসূদনের দুই পা বুকে জড়িয়ে ধরলে, গদগদ কণ্ঠে বললে, “আমাকে মেরে ফেলো তুমি।” মধুসূদন তাকে হাত ধরে তুলে দাড় করালে, বললে, “ইস, তোমার গা যে একেবারে ঠাগু হিম । চলে তোমাকে শুইয়ে দিয়ে আসি গে।” বলে তাকে নিজের শালের এক অংশে আবৃত করে ডান হাত দিয়ে সবলে চেপে ধরে শেবার ঘরে পৌছিয়ে দিয়ে এল। খাম চুপি চুপি বললে, “একটু বসবে না ?” . মধুসূদন বললে, “কাজ আছে।” রাতের বেলা কোথা থেকে ভূত চেপে এতক্ষণ মধুসূদনের কাজ নষ্ট করে দেবার জোগাড় করেছে— আর নয়। কুমুর কাছ থেকে যে উপেক্ষা পেয়েছে তার ক্ষতিপূরণের ভাণ্ডার অন্য কোথাও জমা আছে এটুকু সে বুঝে নিলে। ভালোবাসার ভিতর দিয়ে মানুষ আপনার যে পরম মূল্য উপলব্ধি করে, আজ রাত্রে সেই অনুভব করবার প্রয়োজন মধুসূদনের ছিল। স্যামাস্কন্দরী সমস্ত জীবনমন দিয়ে ওর জন্যে অপেক্ষা করে আছে, সেই আশ্বাসটুকু পেয়ে মধুসুদন আজ রাত্রে কাজের জোর পেলে, যে অমর্যাদার কাটা ওর মনের মধ্যে বিধে আছে তার বেদন অনেকটা কমিয়ে দিলে। এদিকে রাত্রে কুমু যে ধাক্কা পেলে তার মধ্যে ওর একটা সাস্তুনা ছিল। যতবার মধুসূদন তাকে ভালোবাসা দেখিয়েছে, ততবারই কুমুর মনে একটা টানাটানি এসেছে ; ভালোবাসার মূল্যেই এর প্রতিশোধ করা চাই এই কর্তব্যবোধে ওকে অত্যন্ত অস্থির করেছে। এ লড়াইয়ে কুমুর জেতবার কোনো আশা ছিল না। কিন্তু পরাভবটা কুত্ৰ, সেটাকে কেবলই চাপা দেবার জন্যে এতদিন কুমু প্রাণপণে চেষ্টা করেছে। কাল রাত্রে সেই চাপা-দেওয়া পরাভবটা এক মুহূর্তে সম্পূর্ণ ধরা পড়ে গেল। কুমুর অসতর্ক অবস্থায় মধুসূদন স্পষ্ট করে দেখতে পেয়েছে যে কুমুর সমস্ত প্রকৃতি মধুসূদনের প্রকৃতির বিরুদ্ধ ; এইটে নিশ্চিত জানা হয়ে গেল সে ভালো, তার পরে পরস্পরের য কর্তব্য সেটা অকপটভাবে করা সম্ভব হবে। মধুসূদন ওকে কামনা করে, সেইখানেই সমস্যা ; ক্ষোভের সঙ্গে ওকে যে বর্জন করতে চায় সেইখানেই সত্য। সত্যই মধুসূদনের