পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○8bア রবীন্দ্র-রচনাবলী আগৌরব। প্রতিদিনই একান্তমনে ইচ্ছে করেছিল এটা যেন ঘুচে যায়। বিপ্রদাসের মনে এর অসম্মান যে বিধে আছে তাতে কুমুর সন্দেহ ছিল না। সেদিন নবীন যেই বিপ্রদাসের চিঠির ব্যাখ্যা করলে, অমনি কুমুর মনে এল সমস্তর মূলে আছে এই দেনাপাওনার সম্বন্ধ। দাদার শরীর কেন যে এত ক্লাস্ত, কোন কাজের বিশেষ তাগিদে দাদা কলকাতায় চলে এসেছে, কুমু সমস্তই স্পষ্ট বুঝতে পারলে। “কালুদ, আমার কাছে লুকিয়ে না, দাদা টাকা ধার করতে এসেছে।” “ত, ধার করেই তো ধার শুধতে হবে ; টাকা তো আকাশ থেকে পড়ে না । কুটুম্বদের খাতক হয়ে থাকাটা তো ভালো নয়।” “সে তো ঠিক কথা, তা টাকার জোগাড় করতে পেরেছ ?” “ঘুরে ঘেরে দেখছি, হয়ে যাবে, ভয় কী।” “না, আমি জানি, সুবিধে করতে পার নি।” “আচ্ছ ছোটোখুকি, সবই যদি জান, আমাকে জিজ্ঞাসা করা কেন ? ছেলেবেলােয় একদিন আমার গোফ টেনে ধরে জিজ্ঞাসা করেছিলে, গোফ হল কেমন করে ? বলেছিলুম, সময় বুঝে গোফের বীজ বুনেছিলুম বলে। তাতেই প্রশ্নটার তখনই নিষ্পত্তি হয়ে গেল। এখন হলে জবাব দেবার জন্যে ডাক্তার ডাকতে হত। সব কথাই যে তোমাকে স্পষ্ট করে জানাতে হবে সংসারের এমন নিয়ম নয়।” “আমি তোমাকে বলে রাখছি কালুদ, দাদার সম্বন্ধে সব কথাই আমাকে জানতে হবে ।” “কী করে দাদার গোফ উঠল, তাও ?” “দেখো, অমন করে কথা চাপা দিতে পারবে না। আমি দাদার মুখ দেখেই বুঝেছি টাকার সুবিধে করতে পার নি।” “নাই যদি পেরে থাকি, সেটা জেনে তোমার লাভ হবে কী ?” “সে অামি বলতে পারি নে, কিন্তু আমাকে জানতেই হবে। টাকা ধার পাও নি তুমি ?” “না, পাই নি।” “সহজে পাবে না ?” “পাব নিশ্চয়ই, কিন্তু সহজে নয়। তা দিদি, তোমার কথার জবাব দেওয়ার চেষ্ট৷ ছেড়ে পাবার চেষ্টায় বেরোলে কাজ হয়তো কিছু এগোতে পারে। আমি চললুম।” খানিকট গিয়েই আবার ফিরে এসে কালু বললে, “ধুকি, এখানে যে তুমি আজ চলে এলে, তার মধ্যে তো কোনো কাটা খোচা নেই? ঠিক সত্যি করে বলে।”