পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ S)やQ ঘোমটার ভিতর থেকে তার চোখ ছল ছল করতে লাগল। বুঝতে পারলে দাদার এই অবস্থায় কুমুকে ব্যথাই বাজছে। কুমু প্রসঙ্গটা সহজ করে দেবার জন্যে বললে, “দাদা, ইনি বিশেষ করে এসেছেন তোমার মত জিজ্ঞাসা করতে।” মোতির মা বললে, “না না, মত জিজ্ঞাসা পরের কথা, আমি এসেছি ওঁর চরণ দশন করতে ।” কুমু বললে, “উনি জানতে চান, ওঁদের বাড়িতে আমাকে যেতে হবে কি না।” বিপ্রদাস উঠে বসল ; বললে, “সে তো পরের বাড়ি, সেখানে কুমু গিয়ে থাকবে কী করে ?” যদি ক্রোধের সুরে বলত তা হলে কথাটার ভিতরকার আগুন এমন করে জলে উঠত না । শাস্ত কণ্ঠস্বর, মুখের মধ্যে উত্তেজনার লক্ষণ নেই। মোতির মা ফিস্ ফিস করে কী বললে। তার অভিপ্রায় ছিল পাশে বসে কুমু তার কথাগুলো বিপ্রদাসের কানে পৌছিয়ে দেবে। কুমু সন্মত হল না, বললে, “তুমিই গলা ছেড়ে বলে।” মোতির মা স্বর আর-একটু স্পষ্ট করে বললে, “যা ওঁর আপনারই, কেউ তাকে পরের করে দিতে পারে না, তা সে যেই হোক-না।” “সে কথা ঠিক নয়। উনি আশ্রিত মাত্র। ওঁর নিজের অধিকারের জোর নেই। ওঁকে ঘরছাড়া করলে হয়তো নিন্দ করবে, বাধা দেবে না। যত শাস্তি সমস্তই কেবল ওঁর জন্যে। তবু অনুগ্রহের আশ্রয়ও সহ করা যেত যদি তা মহদীশ্রয় হত।” এমন কথার কী জবাব দেবে মোতির মা ভেবে পেলে না। স্বামীর আশ্রয়ে বিঘ্ন ঘটলে মেয়ের পক্ষের লোকেরাই তো পায়ে ধরাধরি করে, এ যে উলটো কাও ৷ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললে, “কিন্তু আপন সংসার না থাকলে মেয়েরা যে বঁাচে না ; পুরুষেরা ভেসে বেড়াতে পারে, মেয়েদের কোথাও স্থিতি চাই তো।” “স্থিতি কোথায় ? অসম্মানের মধ্যে ? আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি, কুমুকে যিনি গড়েছেন তিনি আগাগোড়া পরম শ্রদ্ধা করে গড়েছেন। কুমুকে অবজ্ঞা করে এমন যোগ্যতা কারও নেই, চক্রবর্তী-সম্রাটেরও না।” কুমুকে মোতির মা খুবই ভালোবাসে, ভক্তি করে, কিন্তু তবু কোনো মেয়ের এত মূল্য থাকতে পারে যে তার গৌরব স্বামীকে ছাপিয়ে যাবে এ কথা মোতির মার কানে ঠিক লাগল না। সংসারে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি চলুক, স্ত্রীর ভাগ্যে অনাদরঅপমানও না হয় যথেষ্ট ঘটল, এমন-কি তার থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্যে স্ত্রী অফিম খেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরে সেও বোঝা যায়, কিন্তু তাই বলে স্বামীকে একেবারে বাদ