পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ৩৭১ শুভযোগটি ওই ছবিতে ধরা পড়ে গেছে। এক-একদিন রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠে আলো জালিয়ে ওই ছবিটি দেখেছি। প্রদীপের আলোয় ওর ভিতরকার রূপটি যেন আরও বেশি করে দেখা যায় ।” “দেখো, আমার কাছে অত বাড়াবাড়ি করতে তোমার একটুও ভয় নেই ?” “ভয় যদি থাকত তা হলেই তোমার ভাবনার কথাও থাকত। ওঁকে দেখে আমার আশ্চর্য কিছুতে ভাঙে না । মনে করি আমাদের ভাগ্যে এটা সম্ভব হল কী করে ? আমি যে ওঁকে বউরানী বলতে পারছি এ ভাবলে গায়ে কাটা দেয়। আর উনি যে সামান্য নবীনের মতো মানুষকেও হাসিমুখে কাছে বসিয়ে খাওয়াতে পারেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এও এত সহজ হল কী করে ? অামাদের পরিবারের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য আমার দাদা। যাকে সহজে পেলেন তাকে কঠিন করে বাধতে গিয়েই হারালেন।” “বাস্ রে, বউরানীর কথায় তোমার মুখ যখন খুলে যায় তখন থামতে চায় না।” “মেজেবিউ, জানি তোমার মনে একটুখানি বাজে ।” “না, ককখনো না।” “হা, অল্প একটু। কিন্তু এই উপলক্ষে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো । মুরনগরে স্টেশনে প্রথম বউরানীর দাদাকে দেখে যে-সব কথা বলেছিলে চলতি ভাষায় তাকেও বাড়াবাড়ি বলা চলে।” “আচ্ছ, আচ্ছা, ও-সব তর্ক থাক, এখন কী বলতে চাচ্ছিলে বলে ।” “আমার বিশ্বাস আজকালের মধ্যেই দাদ বউরানীকে ডেকে পাঠাবেন । বউরানী যে এত আগ্রহে বাপের বাড়ি চলে এলেন, আর তার পর থেকে এতদিন ফেরবার নাম নেই, এতে দাদার প্রচও অভিমান হয়েছে তা জানি। দাদা কিছুতেই বুঝতে পারেন না সোনার খাচাতে পাখির কেন লোভ নেই। নিবোধ পাখি, অকৃতজ্ঞ পাখি ” “ত ভালোই তো, বড়োঠাকুর ডেকেই পাঠান-না। সেই কথাই তো ছিল।” “আমার মনে হয়, ডাকবার আগেই বউরানী যদি যান ভালো হয়, দাদার ওইটুকু অভিমানের না হয় জিত রইল। তা ছাড়া বিপ্রদাসবাবু তে চান বউরানী তার সংসারে ফিরে যান, আমিই নিষেধ করেছিলুম।” বিপ্রদাসের সঙ্গে এই নিয়ে আজ কী কথা হয়েছে মোতির মা তার কোনো আভাস দিলে না। বললে, “বিপ্রদাসবাবুর কাছে গিয়ে বলোই-না।” “তাই যাই, তিনি শুনলে খুশি হবেন।” এমন সময় কুমু দরজার বাইরে থেকে বললে, “ঘরে ঢুকব কি ?”