পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৮২ রবীন্দ্র-রচনাবলী মধুসূদন চমকে উঠল— বললে, “সে কী কথা !” “আমাকে তোমার তো দরকার নেই।” মধুসূদন বুঝলে খামান্বন্দরীর খবরটা কানে এসেছে, এটা অভিমান। অভিমানটা ভালোই লাগল। বললে, “কী যে বল তার ঠিক নেই। দরকার নেই তো কী ? শূন্ত ঘর কি ভালো লাগে ?” এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি করতে কুমুর প্রবৃত্তি হল না। সংক্ষেপে আর-একবার বললে, “আমি যাব না।” “মানে কী ? বাড়ির বউ বাড়িতে যাবে না— ?” কুমু সংক্ষেপে বললে, “না।” মধুসূদন সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললে, “কী ! যাবে না ! যেতেই হবে।” কুমু কোনো জবাব করলে না। মধুসূদন বললে, “জান পুলিস ডেকে তোমাকে নিয়ে যেতে পারি ঘাড়ে ধরে । ন’ বললেই হল !" § কুমু চুপ করে রইল। মধুসূদন গর্জন করে বললে, “দাদার স্কুলে মুরনগরি কায়দা শিক্ষা আবার আরম্ভ হয়েছে ?” কুমু দাদার ঘরের দিকে একবার কটাক্ষপাত করে বললে, “চুপ করে, অমন চেচিয়ে কথা কোয়ে না।” "কেন ? তোমার দাদাকে সামলে কথা কইতে হবে নাকি ? জান এই মুহুর্তেই ওকে পথে বার করতে পারি?” পরক্ষণেই কুমু দেখে ওর দাদা ঘরের দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছে। দীর্ঘকায়, শীর্ণদেহ, পাণ্ডুবর্ণ মুখ, বড়ে বড়ো চোখ দুটাে জালাময়, একটা মোট সাদা চাদর গ ঢেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে, কুমুকে ডেকে বললে, “আয় কুমু, আয় আমার ঘরে।” মধুসূদন চেচিয়ে উঠল, বললে, “মনে থাকবে তোমার এই আস্পর্ধা। তোমার মুরনগরের মুর মুড়িয়ে দেব তবে আমার নাম মধুসূদন।” ঘরে গিয়েই বিপ্রদাস বিছানায় শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করলে, কিন্তু ঘুমে নয়, ক্লাস্তিতে ও চিন্তায়। কুমু শিয়রের কাছে বসে পাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগল। এমনি করে অনেকক্ষণ কাটলে পর ক্ষেমাপিসি এসে বললে, “আজ কি খেতে হবে না কুমু? বেলা যে অনেক হল।” বিপ্রদাস চোখ খুলে বললে, “কুমু, যা খেতে যা । তোর কালুদাকে পাঠিয়ে দে।” কুমু বললে, "দাদা, তোমার পায়ে পড়ি এখন কালুদাকে না, একটু ঘুমোবার চেষ্টা করে।”