পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ケや রবীন্দ্র-রচনাবলী কান্না মেটাতে চাই, তার বেশি শক্তি নেই। যে ভালোবাসা আপনাকে দেয় তার অধিক আর কিছু দিতে পারে না, বাছার, সেই ভালোবাসা তোর পেয়েছিস ; জ্যাঠাইমা চিরদিন থাকবে না, কিন্তু এই কথাটা মনে রাখিস, মনে রাখিস, মনে রাখিস।” বলে তার গালে চুমে খেলে। Ç নবীন বলল, “বউরানী, এবার রজবপুরে পৈতৃক ঘরে চলেছি ; এখানকার পাল৷ সাঙ্গ হল ।” কুমু ব্যাকুল হয়ে বললে, “আমি হতভাগিনী এসে তোমাদের এই বিপদ ঘটালুম।” নবীন বললে, “ঠিক তার উলটো। অনেক দিন থেকেই মনট যাই-যাই করছিল। বেঁধে-সেধে তৈরি হয়ে ছিলুম, এমন সময় তুমি এলে আমাদের ঘরে। ঘরের আশ খুব করেই মিটেছিল, কিন্তু বিধাতার সইল না।” সেদিন মধুসূদন ফিরে গিয়ে তুমুল একটা বিপ্লব বাধিয়েছিল তা বোঝা গেল। নবীন যাই বলুক, কুমুই যে ওদের সংসারের সমস্ত ওলটপালট করে দিয়েছে মোতির মার তাতে সন্দেহ নেই, আর সেই অপরাধ সে সহজে ক্ষমা করতে চায় না। তার মত এই যে, এখনও কুমুর সেখানে যাওয়া উচিত মাথা ইেট করে, তার পরে যত লাঞ্ছনাই হোক সেটা মেনে নেওয়া চাই। গলা বেশ একটু কঠিন করেই জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি কি শ্বশুরবাড়ি একেবারেই যাবে না ঠিক করেছ ?” কুমু তার উত্তরে শক্ত করেই বললে, “ন, যাব না।” মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “তা হলে তোমার গতি কোথায় ?” কুমু বললে, “মস্ত এই পৃথিবী, এর মধ্যে কোনো এক জায়গায় আমারও একটুখানি ঠাই হতে পারবে। জীবনে অনেক যায় খসে, তবুও কিছু বাকি থাকে।” কুমু বুঝতে পারছিল, মোতির মার মন ওর কাছ থেকে অনেকখানি সরে এসেছে। নবীনকে জিজ্ঞাসা করলে, “ঠাকুরপো, তা হলে কী করবে এখন ?” “নদীর ধারে কিছু জমি আছে তার থেকে মোট ভাতও জুটবে, কিছু হাওয়া খাওয়াও চলবে ।” মোতির মা উন্মার সঙ্গেই বললে, “ওগো মশায়, না, সেজন্যে তোমাকে ভাবতে হবে না। ওই মির্জাপুরের অন্নজলে দাবি রাখি, সে কেউ কাড়তে পারবে না। আমরা তো এত বেশি সম্মানী লোক নই, বড়োঠাকুর তাড়া দিলেই অমনি বিবাগি হয়ে চলে যাব। তিনিই আবার আজ বাদে কাল ফিরিয়ে ডাকবেন, তখন ফিরেও আসব, ইতিমধ্যে সবুর সইবে, এই বলে রাখলুম।”