পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిసి రి রবীন্দ্র-রচনাবলী দুর্বল থাকে। সামনের দিকে কুমুর জন্যে একটা ছোটো চৌকি ঠিক করে রেখেছে। আলোটা ঘরের কোণে একটু আড়াল করে রাখা। মাথার উপর বড়ো একটা টান৷ পাখা হুস হুস করে চলছে। বৈশাখ-শেষের আকাশে তখনও গরম জমে আছে, দক্ষিণে হাওয়া এক একবার অল্প একটু নিশ্বাস ছেড়েই ঘেমে যাচ্ছে, গাছের পাতাগুলো যেন একান্ত কান-পাতা মনোযোগের মতে নিস্তব্ধ। সমুদ্রের মোহনায় গঙ্গা যেখানে নীল জলকে ফিকে করে দিয়েছে, অন্ধকারটা যেন সেইরকম। দীর্ঘবিলম্বিত গোধূলির শেষ-আলোটা তখনও তার কালিমার ভিতরে ভিতরে মিশ্রিত। বাগানের পুকুরটা ছায়ায় অদৃশ্ব হয়ে থাকত, কিন্তু খুব একটা জলজলে তারার স্থির প্রতিবিম্ব আকাশের অঙ্গুলি সংকেতের মতে তাকে নির্দেশ করে দিচ্ছে। গাছতলার নীচে দিয়ে চাকররা ক্ষণে ক্ষণে লণ্ঠন হাতে করে যাতায়াত করছে, আর পেচা উঠছে ডেকে । কুমু বোধ হয় একটু ইতস্তত করে একটু দেরি করেই এল। বিপ্রদাসের কাছে চৌকিতে বসেই বললে, “দাদা, আমার একটুও ভালো লাগছে না। আমার যেন । কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে।” বিপ্রদাস বললে, “ভুল বলছিস কুমু, তোর ভালোই লাগবে। আর কিছুদিন পরেই তোর মন উঠবে ভরে ।” “কিন্তু তা হলে—” বলে কুমু থেমে গেল। “ত জানি— এখন তোর বন্ধন কাটাবে কে ?” “তবে কি যেতে হবে দাদা ?” “তোকে নিষেধ করতে পারি এমন অধিকার আর আমার নেই। তোর সস্তানকে তার নিজের ঘরছাড়া করব কোন স্পর্ধায় ?” কুমু অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল, বিপ্রদাসও কিছু বললে না। অবশেষে খুব মৃদুস্বরে কুমু জিজ্ঞাসা করলে, “তা হলে কবে যেতে হবে ?” “কালই, আর দেরি সইবে না।” "দাদা, একটা কথা বোধ হয় বুঝতে পারছ, এবার গেলে ওরা আমাকে আর কখনও তোমার কাছে আসতে দেবে না।” “ত আমি খুবই জানি।”

  • আচ্ছ, তাই হবে। কিন্তু একটা কথা তোমাকে বলে রাখি, কোনোদিন কোনো কারণেই তুমি ওদের বাড়ি যেতে পারবে না। জানি দাদা, তোমাকে দেখবার জন্যে আমার প্রাণ হাপিয়ে উঠবে, কিন্তু ওদের ওখানে যেন কখনও তোমাকে না দেখতে হয়। সে আমি সইতে পারব না।”